বাঙলাদেশের একজন শীর্ষস্থানীয় আলেম। সৌদি আরব গেলেন। ইলমসাধক মানুষ, সেখানে গিয়ে সেখানকার শায়খদের সাথে পরিচিত হওয়ার উদ্যোগ নিলেন। কয়েক জন ‘শায়খ’ বাঙলাদেশী আলেমকে একা পেয়ে, বোলতার মতো ছেঁকে ধরলো। হেন অভিযোগ নেই, তারা করলো না:
আপনারা বিদ‘আতব-বেশরা কাজে লিপ্ত। আপনাদের আকীদায়ে তাওহীদও ঠিক নেই। আশআরী-মাতুরীদি আকীদার মতো ভ্রান্ত আকীদাও আপনারা সঠিক বলে মেনে নেন! সেটার প্রচার করেন। আল্লাহর সিফাতের ক্ষেত্রে তাবীল করেন। এমনকি ক্ষেত্র বিশেষে খালিস তাওহীদের আকীদা থেকেও আপনারা বিচ্যুত হয়ে পড়েন!
বাঙলাদেশী আলিম তাদের এসব অভিযোগের জবাব কী দিয়েছিলেন, সেটা বিস্তারিত বর্ণনা দেয়ার অবকাশ এখানে নেই। শুধু তিনি যে বাক্যটা দিয়ে তার বক্তব্য শুরু করেছিলেন সেটা বলেই আজকের মূল প্রসঙ্গে চলে যাবো।
তিনি বলেছিলেন:
আনতুম তুয়াহহিদুনাল্লাহ ওয়া তা‘বুদূনাল-মালিকা ওয়া আমরীকা।
-আপনারা আল্লাহকে এক মানেন আর এবাদত করেন রাজা ও আমেরিকার!
আমরা আজ বেশির ভাগ মুসলিম শাসক বিশেষ করে আরব রাজা-বাদশাদের ধর্ম ও আকীদার স্বরূপ বের করার চেষ্টা করবো:
১: তাদের ধর্ম: ইস্তেসলা-মিয়্যাহ। আত্মসমর্পনবাদ।
২: ঈমানের আরকান:
ক: আমেরিকার প্রতি পূর্ণ ঈমান আনয়ন। রুবূবিয়্যাত, উলূহিয়্যত, আসমা ও সিফাতের ক্ষেত্রে।
খ: মার্কিন সরকারের গোপন হাত (শক্তি)-এর প্রতি ঈমান আনয়ন।
গ: মার্কিন দূত ও দূতাবাসের প্রতি পূর্ণ আস্থা ও বিশ্বাস স্থাপন।
ঘ: মার্কিন গণতন্ত্রের প্রতি পূর্ণ ঈমান আনয়ন। নিজেরা বাস্তবায়ন করতে না পারলেও, আকীদা ঠিক রাখা, আমল না করলেও চলবে।
ঙ: ঈতায়ে জিযিয়া। মার্কিন সরকারকে জাতিসংঘে চাঁদাদানের মাধ্যমে বার্ষিক জিযিযা কর বা যাকাত দেয়া।
চ: সওমে দাহর। কথা না বলার রোজা রাখা। আমেরিকার বিরুদ্ধে টু-শব্দটিও করবো না, এ-মর্মে!
ছ: সময়ে সময়ে ‘কসরে আবইয়ায’ বা শ্বেতপ্রাসাদের উদ্দেশ্যে হজ করা। সামর্থ্য থাকুক আর না থাকুক!
৩: নাওয়াকিযুল ইস্তেসলাম। ঈমান ভঙ্গকারী বিষয়াবলী:-
জেনে হোক না জেনে হোক, ইচ্ছায় হোক অনিচ্ছায় হোক, ভয়ে হোক বাধ্য হয়ে হোক, সিরিয়াসভাবে হোক বা রসিকতাছলে হোক-ঈমান ভঙ্গকারী কোনও বিষয় পাওয়া গেলেই, মুস্তাসলিম (আত্মসমর্পনকারী)-এর জীবনেসংশয় দেখা দিবে। এজন্য মুস্তাসলিমের উচিত এসব অতি সতর্কতার সাথে পরিহার করে চলা
ক: আমেরিকার এবাদত অন্য কাওকে শরীক করা। হযরত বুশ (তার ওপর মুসলমানের মাবুদের পক্ষ হতে উপযুক্ত বিষয় পতিত হোক)-এর কথা:
-যে আমাদের সাথে নেই, সেই আমাদের শত্রু আমেরিকার সাথে শিরকের প্রধান আলামত হলো, অন্য কারো নামে যবেহ (যুদ্ধ) করা।
খ: যে শাসক নিজের মাঝে ও আমেরিকার মাঝে অন্য কোনও মাধ্যম তৈরী করলো, তার কাছে প্রার্থনা করে, তার কাছে সুপারিশ কামনা করে, তার ওপর তাওয়াক্কুল করে, সরাসরি আমেরিকাকে সিজদা করে না, তাহলে সে সর্বসম্মতিক্রমে কুফরান বাওয়াহা (সুস্পষ্ট কুফুরিতে) লিপ্ত হলো।
গ: যে শাসক আমেরিকার প্রতি শিরিককারীদেরকে কাফের মনে করবে না, অথবা তাদের কুফুরির ব্যাপারে সন্দেহ পোষণ করবে অথবা তাদের ধর্মকে সঠিক বলে মনে করবে-সে সরাসরি কুফুরিতে নিপতিত হবে। এরা নিজেদেরকে মুজাহিদ বলে দাবী করে। শাসক ও তাদের দোসররা অবশ্য তাদেরকে সন্ত্রাসী-জঙ্গী-উগ্রবাদীও বলে থাকে। হালে এদেরকে ‘খারেজী’ বলারও ছল শুরু হয়েছে!
ঘ: যে বিশ্বাস করবে: আমেরিকার (হুদা) আদর্শ ছেড়ে অন্য অদর্শে বিশ্বাস করবে, অথবা অন্য আদর্শকে বেশি পূর্ণ মনে করবে, অথবা বেশি উত্তম মনে করবে-সে কাফের।
ঙ: আমেরিকার রাসূল (রাষ্ট্রদূত-প্রতিনিধি)কর্তৃক আনীত প্রস্তাব/চুক্তি উপেক্ষা করবে, সে কাফের।
চ: যে আমেরিকার শাসনব্যবস্থা, মূলনীতি, দান-প্রতিদান, পুরস্কার-তিরস্কারকে উপহাস করবে, সে কাফের।
ছ: যে ইসলামকে প্রতিষ্ঠার চেষ্টা চালাল, অথবা ইসলামী আইনের প্রতি দুর্বল হলো, সে আমেরিকার প্রতি কুফুরি করলো।
জ: যে আমেরিকার বিরুদ্ধে মুসলমানদেরকে ও আমেরিকার শত্রুদেরকে সাহায্য করলো, সে কুফুরি করলো।
ঝ: যে বিশ্বাস করবে: আমেরিকার নিয়ন্ত্রণ থেকে, তার প্রতিষ্ঠিত বিশ্বব্যবস্থা থেকে বের হয়ে নতুন কিছু করবে, খিলাফাহ কায়েম করবে, সে সুষ্পষ্ট কাফের!
ঞ: আমেরিকান গণতন্ত্র ও তার প্রণীত প্রশাসন ব্যবস্থাকে যে উপেক্ষা করবে, সে কাফের।
এসব শাসকের কাছে স্বতঃসিদ্ধ নিয়ম হলো:
-নিশ্চয় বড় কুফুরি হলো, ইসলামী শরীয়াহ ও খিলাফাহকে আমেরিকা (আলআমীন) কর্তৃক নাযিলকৃত গণতন্ত্রের স্থলাভিষিক্ত করা। যা ইলহাম করা হয়েছে দূত ও উপদেষ্টাদের ওপর। যেন তারা সুস্পষ্ট ইংরেজী ভাষায় সতর্ককারী হতে পারে!
আরেকটি মূলনীতি হলো:
-যদি তোমরা কোনও বিষয়ে মতভেদে লিপ্ত হও, তাহলে সেটাকে ইহুদিসমর্থিত আন্তর্জাতিক আদালতে সোপর্দ করো (সুরাতুন-নিফাক)।
৪: কায়েদা চতুষ্টয়
প্রথম কায়েদা: এটা জেনে রাখো: যাদের সাথেই আমেরিকা যুদ্ধে লিপ্ত হবে, এবং যারাই বলবে: আমেরিকা একটা সাম্রাজ্যবাদী শক্তি, ইহুদিদের দালাল, তারা এই ‘ইস্তেসলা-মিয়্যাহ’ ধর্মে দাখিল হতে পারবে না।
দ্বিতীয় কায়েদা: শাসকরা আমেরিকান দূত বা প্রতিনিধিদেরকে কোনও রকমের প্রশ্নের সম্মুখীন করতে পারবে না। শুধু তাদেরকে উসীলা হিশেবে ধরে, মার্কিন সরকারের কাছে শাফায়াত চাইতে পারবে। শাফায়াত দুই প্রকার:
ক: শাফায়াতে মানফিয়্যাহ। নেতিবাচক শাফায়াত
খ: শাফায়াতে মুসবিতাহ। ইতিবাচক শাফায়াত।
প্রথমটা হলো:আমেরিকা ছাড়া অন্য কেউ দিতে পারবে না, এমন কিছু অন্য কারো কাছে চাওয়া, কুফুরি।
দ্বিতীয়টা হলো: আমেরিকার প্রতিনিধির কাছে কিছু চাওয়া। তিনিই সরকারের অনুমতিক্রমে সুপারিশ করতে পারবেন।
তৃতীয় কায়েদা: একদল আছে অস্ত্র দিয়ে জিহাদ করে, আরেক দল শান্তিপূর্ণ উপায়ে ইসলামের দাওয়াত দেয়, আরেক দল সেবামূলক কাজ, শিক্ষাদীক্ষা নিয়ে কাজ করে।
আমেরিকার সৈন্যরা কাউকে ছাড় দিবে না। কারন এরা সবাই ‘ইস্তেসলামী আকীদার’ শত্রুপক্ষ। মানবাত ও পাশ্চাত্য সভ্যতার দুশমন।
চতুর্থ কায়েদা: আমেরিকার প্রতি শিরিককারীরা পূর্বেকর মুশরিকদের চেয়েও কঠিন শিরকে নিপতিত। কারন আগেকার লোকেরা শুধু কঠিন বিপদের পড়লেই শুধু মৌখিকভাবে শিরিকীবাক্য বলতো, তাও সবাই নয়। আর তারা স্বাভাবিক অবস্থায় মুখলিস থাকতো।
কিন্তু বর্তমানের মুশরিকদের কোনও সময়কাল নেই। তারা সব সময় আমেরিকার বিরুদ্ধে লেগেই আছে। তার বিরুদ্ধে লড়াই চালিয়েই যাচ্ছে।
৫: উসূলে সালাসা। তিন মূলনীতি।
প্রথম মূলনীতি: রব সম্পর্কে জানা।
-তোমার রব কে?
-মার্কিন প্রেসিডেন্ট। যিনি আমাকে এবং পুরো বিশ্বকে তার নেয়ামত দ্বারা প্রতিপালন করছেন। তিনি আমার মাবুদ। তিনি ছাড়া আর কোনও মাবুদ নেই।
-তুমি কী দ্বারা তোমার রবকে চিনেছ?
-তার শক্তি দ্বারা। তার প্রতাপ দ্বারা। সারা বিশ্বে তার আধিপত্য বিস্তার দ্বারা। তাকে ছাড়া আর কারো পূজা করা যাবে না। আর কারো কাছে চাওয়া যাবে না। তাকে ছাড়া আর কাউকে ভয় করা যাবে না। আর কারো কাছে আশ্রয় প্রার্থনা করা যাবে না। আর কারো নামে যবেহ করা যাবে না। নযর মানা যাবে না।
দ্বিতীয় মূলনীতি: দলীল দ্বারা দ্বীনকে বোঝা।
-তোমার দ্বীন কী?
-আলইস্তেসলাম।
-সেটা কেমন?
-আমেরিকার একক ক্ষমতার প্রতি বিশ্বাস স্থাপন করা ও নিজেকে সমর্পন করা। ইসলাম ও তার অনুসারীদের থেকে নিজেকে আলাদা করে ফেলা। এই কাজের তিনটা স্তর আছে:
ক: ইস্তেসলাম।
খ: ঈমান।
গ: ইহসান।
প্রতিটি স্তরের কয়েকটি রুকন আছে। প্রথম দুইটা সম্পর্কে আগেই আলোচনা গিয়েছে। এখন তৃতীয়টা সম্পর্কে:
-ইহাসন অর্থ: মার্কিন প্রেসিডেন্টের পূজা এমনভাবে করা, যেন আমি তাকে দেখতে পাচ্ছি। যদি আমি তাকে নাও দেখি, তিনি নিশ্চিতরূপেই আমাকে দেখতে পাচ্ছেন। তার গোয়েন্দা স্যাটেলাইট ও ডিভাইসের মাধ্যমে।
তৃতীয় মূলনীতি: আমেরিকার প্রেরিতপুরুষ সম্পর্কে জানা। তারা হলো, মার্কিন দূত ও সচীববৃন্দ।
৬: ওয়ালা বারা ও হুব্ব-বুগয-এর আকীদা ওয়ালা-বারা: আমেরিকা যাকে বন্ধু মনে করে, আমারও তাকে বন্ধু মনে করা। আমেরিকা যাকে শত্রু মনে করে, আমারও তাকে শত্রু মনে করা। আগে রাশিয়া-ইরান আমেরিকার শত্রু ছিল, আমারও শত্রু ছিল। এখন বন্ধু হতে শুরু করেছে, আমারও তাই।
হুব্ব-বুগয: ঘৃণা-ভালোবাসার আকীদা হলো: মুসলিম যুবকরা আমেরিকার শত্রু রাশিয়ার বিরুদ্ধে জিহাদে নেমেছিল। আমেরিকা তখন দু’হাত খুলে তাদেরকে সাহায্য করেছে। ইস্তেসলাম ধর্মের শাসকরাও দেদার যুবকদেরকে সাহায্য করেছে। সবাই মিলে যুবকদেরকে উপাধি দিয়েছে: মুজাহিদ, দ্বীনের রক্ষক।
এরপর যখন আমেরিকা যুবকদের থেকে মুখ ফিরিয়ে নিল, ইস্তেসলামী শাসকরাও মুখ ফিরিয়ে নিল। শুধু তাই নয়,, তারা যুবকদেরকে জাহেল, খারেজী বলে গালি দিতে শুরু করলো।
সাদ্দাম যখন আমেরিকার প্ররোচনায় ইরানের সাথে যুদ্ধে লিপ্ত হলো। ইস্তেসলাম ধর্মের অনুসারী শাসকরাও সাদ্দামকে মাথায় তুলে নাচল। তাকে ‘সাইফুল আরব’ আরো নানা উপাধিতে ভূষিত করলো।
পরে যখন আমেরিকার স্বার্থ ফুরোল, সাদ্দামকে ছুঁড়ে ফেললো, ইস্তেসলামী শাসকরাও তাই করলো।
= এই ছিল ইস্তেসলাম ধর্মের অনুসারী শাসকদের আকীদা-বিশ্বাস। তারা তাদের দেশ শাসন করে মার্কিন শরীয়ত অনুযায়ী। তারা তাদের সন্তানদের শিক্ষা দেয়, কিভাবে মার্কিনিদের আনুগত্য করতে হবে। তারা তাদের জানমাল খরচ করে, আমেরিকার রেযামন্দি হাসিলের উদ্দেশ্যে। যারা তাদের এই ইস্তেসলামী ধর্মে বিশ্বাস করবে না, যারা তাদের বিরুদ্ধে অস্ত্র ধারন করবে, তারা কাফের। তাদের জানমাল সব হালাল। তাদেরকে বোমা মেরে, রাসায়নিক অস্ত্র প্রয়োগ করে মেরে ফেলা হালাল।