আন-নিসা, আয়াত ১৫৫-১৭৬

পৃষ্ঠা নং ২৯৪

فَبِمَا نَقۡضِهِم مِّيثَٰقَهُمۡ وَكُفۡرِهِم بِ‍َٔايَٰتِ ٱللَّهِ وَقَتۡلِهِمُ ٱلۡأَنۢبِيَآءَ  بِغَيۡرِ حَقّٖ وَقَوۡلِهِمۡ قُلُوبُنَا غُلۡفُۢۚ  بَلۡ طَبَعَ ٱللَّهُ عَلَيۡهَا بِكُفۡرِهِمۡ  فَلَا يُؤۡمِنُونَ إِلَّا قَلِيلٗا ١٥٥

১৫৫.অতএব, তারা যে শাস্তিপ্রাপ্ত হয়েছিল, তা ছিল তাদেরই অঙ্গীকার ভঙ্গের জন্য এবং অন্যায়ভাবে রসূলগণকে হত্যা করার কারণে এবং তাদের এই উক্তির দরুন যে, আমাদের হৃদয় আচ্ছন্ন। অবশ্য তা নয়, বরং কুফরীর কারণে স্বয়ং আল্লাহ তাদের অন্তরের উপর মোহর এঁটে দিয়েছেন। ফলে এরা ঈমান আনে না কিন্তু অতি অল্পসংখ্যক।

وَبِكُفۡرِهِمۡ وَقَوۡلِهِمۡ عَلَىٰ مَرۡيَمَ بُهۡتَٰنًا  عَظِيمٗا ١٥٦

১৫৬.আর তাদের কুফরী এবং মারয়ামের প্রতি মহা অপবাদ আরোপ করার কারণে।

وَقَوۡلِهِمۡ إِنَّا قَتَلۡنَا ٱلۡمَسِيحَ عِيسَى ٱبۡنَ مَرۡيَمَ رَسُولَ  ٱللَّهِ وَمَا قَتَلُوهُ وَمَا صَلَبُوهُ وَلَٰكِن شُبِّهَ لَهُمۡۚ وَإِنَّ ٱلَّذِينَ ٱخۡتَلَفُواْ فِيهِ لَفِي شَكّٖ مِّنۡهُۚ  مَا لَهُم بِهِۦ مِنۡ عِلۡمٍ إِلَّا ٱتِّبَاعَ ٱلظَّنِّۚ  وَمَا قَتَلُوهُ يَقِينَۢا ١٥٧

১৫৭.আর তাদের একথা বলার কারণে যে, আমরা মারয়াম পুত্র ঈসা মাসীহকে হত্যা করেছি যিনি ছিলেন আল্লাহর রসূল। অথচ তারা না তাঁকে হত্যা করেছে, আর না শুলীতে চড়িয়েছে, বরং তারা এরূপ ধাঁধায় পতিত হয়েছিল। বস্তুতঃ তারা এ ব্যাপারে নানা রকম কথা বলে, তারা এক্ষেত্রে সন্দেহের মাঝে পড়ে আছে, শুধুমাত্র অনুমান করা ছাড়া তারা এ বিষয়ে কোন খবরই রাখে না। আর নিশ্চয়ই তাঁকে তারা হত্যা করেনি।

بَل رَّفَعَهُ ٱللَّهُ إِلَيۡهِۚ  وَكَانَ ٱللَّهُ عَزِيزًا حَكِيمٗا  ١٥٨

১৫৮.বরং তাঁকে উঠিয়ে নিয়েছেন আল্লাহ তা’আলা নিজের কাছে। আর আল্লাহ হচ্ছেন মহাপরাক্রমশালী, প্রজ্ঞাময়।

وَإِن مِّنۡ أَهۡلِ ٱلۡكِتَٰبِ إِلَّا لَيُؤۡمِنَنَّ بِهِۦ قَبۡلَ مَوۡتِهِۦۖ  وَيَوۡمَ  ٱلۡقِيَٰمَةِ يَكُونُ عَلَيۡهِمۡ شَهِيدٗا ١٥٩

১৫৯.আর আহলে-কিতাবদের মধ্যে যত শ্রেণী রয়েছে তারা সবাই ঈমান আনবে ঈসার উপর তাদের মৃত্যুর পূর্বে। আর কেয়ামতের দিন তাদের জন্য সাক্ষীর উপর সাক্ষী উপস্থিত হবে।

فَبِظُلۡمٖ مِّنَ ٱلَّذِينَ هَادُواْ  حَرَّمۡنَا عَلَيۡهِمۡ طَيِّبَٰتٍ أُحِلَّتۡ لَهُمۡ وَبِصَدِّهِمۡ عَن سَبِيلِ ٱللَّهِ  كَثِيرٗا ١٦٠

১৬০.বস্তুতঃ ইহুদীদের জন্য আমি হারাম করে দিয়েছি বহু পূত-পবিত্র বস্তু যা তাদের জন্য হালাল ছিল-তাদের পাপের কারণে এবং আল্লাহর পথে অধিক পরিমাণে বাধা দানের দরুন।

وَأَخۡذِهِمُ ٱلرِّبَوٰاْ وَقَدۡ نُهُواْ عَنۡهُ وَأَكۡلِهِمۡ أَمۡوَٰلَ ٱلنَّاسِ بِٱلۡبَٰطِلِۚ  وَأَعۡتَدۡنَا لِلۡكَٰفِرِينَ مِنۡهُمۡ عَذَابًا أَلِيمٗا ١٦١

১৬১.আর এ কারণে যে, তারা সুদ গ্রহণ করত, অথচ এ ব্যাপারে নিষেধাজ্ঞা আরোপ করা হয়েছিল এবং এ কারণে যে, তারা অপরের সম্পদ ভোগ করতো অন্যায়ভাবে। বস্তুত; আমি কাফেরদের জন্য তৈরী করে রেখেছি বেদনাদায়ক আযাব।

لَّٰكِنِ ٱلرَّٰسِخُونَ فِي ٱلۡعِلۡمِ مِنۡهُمۡ وَٱلۡمُؤۡمِنُونَ يُؤۡمِنُونَ بِمَآ أُنزِلَ إِلَيۡكَ  وَمَآ أُنزِلَ مِن قَبۡلِكَۚ  وَٱلۡمُقِيمِينَ ٱلصَّلَوٰةَۚ  وَٱلۡمُؤۡتُونَ ٱلزَّكَوٰةَ  وَٱلۡمُؤۡمِنُونَ بِٱللَّهِ وَٱلۡيَوۡمِ ٱلۡأٓخِرِ أُوْلَٰٓئِكَ سَنُؤۡتِيهِمۡ أَجۡرًا عَظِيمًا ١٦٢

১৬২.কিন্তু যারা তাদের মধ্যে জ্ঞানপক্ক ও ঈমানদার, তারা তাও মান্য করে যা আপনার উপর অবতীর্ণ হয়েছে এবং যা অবতীর্ণ হয়েছে আপনার পূর্বে। আর যারা নামাযে অনুবর্তিতা পালনকারী, যারা যাকাত দানকারী এবং যারা আল্লাহ ও কেয়ামতে আস্থাশীল। বস্তুতঃ এমন লোকদেরকে আমি দান করবো মহাপুণ্য।

আনুষঙ্গিক জ্ঞাতব্য বিষয়:

সূরা আলে-ইমরানের يَا عِيسَى إِنِّي مُتَوَفِّيكَ وَرَافِعُكَ إِلَيَّ – আয়াতের মাধ্যমে আল্লাহ্ তাআলা দুশমন ইহুদীদের দূরভিসন্ধি বানচাল করে তাদের কবল থেকে হযরত ঈসা (আঃ)-কে হেফাযত করা প্রসঙ্গে পাঁচটি প্রতিশ্রুতি দিয়েছিলেন। যার বিস্তারিত ব্যাখ্যা সূরা আলে-ইমরানের তাফসীরে বর্ণনা করা হয়েছে। তন্মধ্যে অন্যতম ওয়াদা ছিল তাঁকে হত্যা করার কোন সুযোগ ইহুদীদেরকে দেয়া হবে না, বরং আল্লাহ্ তাআলা তাঁকে নিজের কাছে তুলে নেবেন। সূরা নিসার আলোচ্য আয়াতে ইহুদীদের দুষ্কর্মের বর্ণনার সাথে সাথে খোদায়ী ওয়াদা বাস্তবায়নের কথা উল্লেখ করে হযরত ঈসা (আঃ)-এর হত্যা সংক্রান্ত ইহুদীদের মিথ্যা দাবী খণ্ডন করা হয়েছে। এখানে স্পষ্ট ঘোষণা করা হয়েছে যে, وَمَا قَتَلُوهُ وَمَا صَلَبُوهُ – অর্থাৎ ওরা হযরত ঈসা (আঃ)-কে হত্যাও করতে পারেনি, শূলেও চড়াতে পারেনি, বরং আসলে ওরা সন্দেহে পতিত হয়েছিল।

সন্দেহ কিভাবে সৃষ্টি হয়েছিলঃ وَلَٰكِن شُبِّهَ لَهُمْ ۚ –এর ব্যাখ্যা প্রসঙ্গে ইমামে-তাফসীর হযরত যাহ্‌হাক (রাহ্ঃ) বলেন- ইহুদীরা যখন হযরত ঈসা (আঃ)-কে হত্যা করতে বদ্ধপরিকর হলো, তখন তাঁর ভক্ত সহচরবৃন্দ এক স্থানে একত্রিত হলেন। হযরত ঈসা (আঃ)ও সেখানে উপস্থিত হলেন। শয়তান ইবলীস তখন রক্তপিপাসু ইহুদী ঘাতকদেরকে হযরত ঈসা (আঃ)-এর অবস্থানের ঠিকানা জানিয়ে দিল। চার হাজার ইহুদী দুরাচার একযোগে গৃহ অবরোধ করলো। তখন হযরত ঈসা (আঃ) স্বীয় ভক্ত অনুচরগণকে সম্বোধন করে বললেন, তোমাদের মধ্যে কেউ অত্র গৃহ হতে বহির্গত ও নিহত হতে এবং পরকালে বেহেশতে আমার সাথী হতে প্রস্তুত আছো কি? জনৈক ভক্ত আত্মোৎসর্গের জন্যে উঠে দাঁড়ালেন। হযরত ঈসা (আঃ) নিজের জামা ও পাগড়ী তাঁকে পরিধান করালেন। অতঃপর তাঁকে হযরত ঈসা (আঃ)-এর সাদৃশ্য করে দেয়া হলো। যখন তিনি গৃহ থেকে বহির্গত হলেন, তখন ইহুদীরা ঈসা (আঃ) মনে করে তাঁকে বন্দী করে নিয়ে গেল এবং শূলে চড়িয়ে হত্যা করলো। অপরদিকে হযরত ঈসা (আঃ)-কে আল্লাহ্ তাআলা আসমানে তুলে নিলেন।–(তাফসীরে-কুরতুবী)।

অন্য এক বর্ণনায় পাওয়া যায় যে, ইহুদীরা ‘তায়তালানুস’ নামক জনৈক নরাধমকে সর্বপ্রথম হযরত ঈসা (আঃ)-কে হত্যা করার জন্য পাঠিয়েছিল। কিন্তু ইতিপূর্বে আল্লাহ্ তাআলা তাঁকে আসমানে তুলে নেওয়ায় সে তাঁর নাগাল পেল না। বরং ইতিমধ্যে তার নিজের চেহারা হযরত ঈসা (আঃ)-এর মত হয়ে গেল। ব্যর্থ মনোরথ হয়ে সে যখন গৃহ থেকে বেরিয়ে এল তখন অন্যান্য ইহুদীরা তাকেই ঈসা (আঃ) মনে করে পাকড়াও করলো, এবং শূলেতে বিদ্ধ করে হত্যা করলো। – (তাফসীরে-মাযহারী)

উপরোক্ত বর্ণনাদ্বয়ের মধ্যে যে কোনটিই সত্য হতে পারে। কোরআন কারীম এ সম্পর্কে স্পষ্ট কিছু ব্যক্ত করেনি। অতএব, প্রকৃত ঘটনার সঠিক খবর একমাত্র আল্লাহ্ তাআলাই জানেন। অবশ্য কোরআন পাকের আয়াত ও তার তাফসীর সংক্রান্ত রেওয়াতের সমন্বয়ে সিদ্ধান্ত করা যায় যে, প্রকৃত ঘটনা ইহুদী-খৃস্টানদেরও অজ্ঞাত ছিল। তারা চরম বিভ্রান্তির আবর্তে নিক্ষিপ্ত হয়ে শুধু অনুমান করে বিভিন্ন উক্তি ও দাবী করছিল। ফলে উপস্থিত লোকদের মধ্যে চরম মতভেদ ও বিবাদের সৃষ্টি হয়েছিল। তাই পবিত্র কোরআনে এরশাদ হয়েছেঃ

Share on facebook
Facebook
Share on twitter
Twitter
Share on linkedin
LinkedIn
সব বিভাগ