আন-নিসা, আয়াত ৯২-১১৩

পৃষ্ঠা নং-২৭৪

وَمَا كَانَ لِمُؤۡمِنٍ أَن يَقۡتُلَ مُؤۡمِنًا إِلَّا خَطَ‍ٔٗاۚ وَمَن قَتَلَ مُؤۡمِنًا خَطَ‍ٔٗا فَتَحۡرِيرُ رَقَبَةٖ مُّؤۡمِنَةٖ وَدِيَةٞ مُّسَلَّمَةٌ إِلَىٰٓ أَهۡلِهِۦٓ إِلَّآ أَن يَصَّدَّقُواْۚ  فَإِن كَانَ مِن قَوۡمٍ عَدُوّٖ لَّكُمۡ وَهُوَ مُؤۡمِنٞ فَتَحۡرِيرُ رَقَبَةٖ مُّؤۡمِنَةٖۖ  وَإِن كَانَ مِن قَوۡمِۢ بَيۡنَكُمۡ وَبَيۡنَهُم مِّيثَٰقٞ فَدِيَةٞ مُّسَلَّمَةٌ إِلَىٰٓ أَهۡلِهِۦ وَتَحۡرِيرُ رَقَبَةٖ مُّؤۡمِنَةٖۖ  فَمَن لَّمۡ يَجِدۡ فَصِيَامُ شَهۡرَيۡنِ مُتَتَابِعَيۡنِ تَوۡبَةٗ مِّنَ ٱللَّهِۗ  وَكَانَ ٱللَّهُ عَلِيمًا حَكِيمٗا ٩٢

৯২.মুসলমানের কাজ নয় যে, মুসলমানকে হত্যা করে; কিন্তু ভুলক্রমে। যে ব্যক্তি মুসলমানকে ভূলক্রমে হত্যা করে, সে একজন মুসলমান ক্রীতদাস মুক্ত করবে এবং রক্ত বিনিময় সমর্পন করবে তার স্বজনদেরকে; কিন্তু যদি তারা ক্ষমা করে দেয়। অতঃপর যদি নিহত ব্যক্তি তোমাদের শত্রু সম্প্রদায়ের অন্তর্গত হয়, তবে মুসলমান ক্রীতদাস মুক্ত করবে এবং যদি সে তোমাদের সাথে চুক্তিবদ্ধ কোন সম্প্রদায়ের অন্তর্গত হয়, তবে রক্ত বিনিময় সমর্পণ করবে তার স্বজনদেরকে এবং একজন মুসলমান ক্রীতদাস মুক্ত করবে। অতঃপর যে ব্যক্তি না পায়, সে আল্লাহর কাছ থেকে গোনাহ মাফ করানোর জন্যে উপর্যুপুরি দুই মাস রোযা রাখবে। আল্লাহ, মহাজ্ঞানী, প্রজ্ঞাময়।

وَمَن يَقۡتُلۡ مُؤۡمِنٗا مُّتَعَمِّدٗا فَجَزَآؤُهُۥ جَهَنَّمُ خَٰلِدٗا فِيهَا وَغَضِبَ ٱللَّهُ عَلَيۡهِ وَلَعَنَهُۥ وَأَعَدَّ لَهُۥ عَذَابًا عَظِيمٗا ٩٣

৯৩.যে ব্যক্তি স্বেচ্চাক্রমে মুসলামানকে হত্যা করে, তার শাস্তি জাহান্নাম, তাতেই সে চিরকাল থাকবে। আল্লাহ্ তার প্রতি ক্রুদ্ধ হয়েছেন, তাকে অভিসম্পাত করেছেন এবং তার জন্যে ভীষন শাস্তি প্রস্তুত রেখেছেন।

يَٰٓأَيُّهَا ٱلَّذِينَ ءَامَنُوٓاْ إِذَا ضَرَبۡتُمۡ فِي سَبِيلِ ٱللَّهِ فَتَبَيَّنُواْ وَلَا تَقُولُواْ لِمَنۡ أَلۡقَىٰٓ إِلَيۡكُمُ ٱلسَّلَٰمَ لَسۡتَ مُؤۡمِنٗا تَبۡتَغُونَ عَرَضَ ٱلۡحَيَوٰةِ ٱلدُّنۡيَا فَعِندَ ٱللَّهِ مَغَانِمُ كَثِيرَةٞۚ  كَذَٰلِكَ كُنتُم مِّن قَبۡلُ فَمَنَّ ٱللَّهُ عَلَيۡكُمۡ فَتَبَيَّنُوٓاْۚ  إِنَّ ٱللَّهَ كَانَ بِمَا تَعۡمَلُونَ خَبِيرٗا ٩٤

৯৪.হে ঈমানদারগণ! তোমরা যখন আল্লাহর পথে সফর কর, তখন যাচাই করে নিও এবং যে, তোমাদেরকে সালাম করে তাকে বলো না যে, তুমি মুসলমান নও। তোমরা পার্থিব জীবনের সম্পদ অন্বেষণ কর, বস্তুতঃ আল্লাহর কাছে অনেক সম্পদ রয়েছে। তোমরাও তো এমনি ছিলে ইতিপূর্বে; অতঃপর আল্লাহ তোমাদের প্রতি অনুগ্রহ করেছেন। অতএব, এখন অনুসন্ধান করে নিও। নিশ্চয় আল্লাহ তোমাদের কাজ কর্মের খবর রাখেন।

لَّا يَسۡتَوِي ٱلۡقَٰعِدُونَ مِنَ ٱلۡمُؤۡمِنِينَ غَيۡرُ أُوْلِي ٱلضَّرَرِ وَٱلۡمُجَٰهِدُونَ فِي سَبِيلِ ٱللَّهِ بِأَمۡوَٰلِهِمۡ وَأَنفُسِهِمۡۚ  فَضَّلَ ٱللَّهُ ٱلۡمُجَٰهِدِينَ بِأَمۡوَٰلِهِمۡ وَأَنفُسِهِمۡ عَلَى ٱلۡقَٰعِدِينَ دَرَجَةٗۚ  وَكُلّٗا وَعَدَ ٱللَّهُ ٱلۡحُسۡنَىٰۚ  وَفَضَّلَ ٱللَّهُ ٱلۡمُجَٰهِدِينَ عَلَى ٱلۡقَٰعِدِينَ أَجۡرًا عَظِيمٗا ٩٥

৯৫.গৃহে উপবিষ্ট মুসলমান-যাদের কোন সঙ্গত ওযর নেই এবং ঐ মুসলমান যারা জান ও মাল দ্বারা আল্লাহর পথে জেহাদ করে,-সমান নয়। যারা জান ও মাল দ্বারা জেহাদ করে, আল্লাহ তাদের পদমর্যাদা বাড়িয়ে দিয়েছেন গৃহে উপবিষ্টদের তুলনায় এবং প্রত্যেকের সাথেই আল্লাহ কল্যাণের ওয়াদা করেছেন। আল্লাহ মুজাহেদীনকে উপবিষ্টদের উপর মহান প্রতিদানে শ্রেষ্ঠ করেছেন।

আনুষঙ্গিক জ্ঞাতব্য বিষয়:

যোগসূত্রঃ পূর্ব থেকে হত্যা ও যুদ্ধের আলোচনা চলে এসেছে। হত্যা সর্বমোট আট প্রকার। কেননা, নিহত ব্যক্তি হয় মুসলমান, না হয় যিম্মী, না হয় চুক্তিবদ্ধ ও অভয়প্রাপ্ত এবং না হয় দারুল ‘হারবের কাফের হবে। এ চার অবস্থার কোন না কোন একটি হবেই। হত্যাকারী দুই প্রকারঃ হয় ইচ্ছাকৃত, না হয় ভ্রমবশতঃ। অতএব, মোট প্রকার হল আটটিঃ (এক) মুসলমানকে ইচ্ছাকৃত হত্যা, (দুই) মুসলমানকে ভ্রমবশতঃ হত্যা, (তিন) যিম্মীকে ইচ্ছাকৃত হত্যা, (চার) যিম্মীকে ভ্রমবশতঃ হত্যা, (পাঁচ) চুক্তিবদ্ধ ব্যক্তিকে ইচ্ছাকৃত হত্যা, (ছয়) চুক্তিবদ্ধ ব্যক্তিকে ভ্রমবশতঃ হত্যা, (সাত) ‘হারবী কাফেরকে ইচ্ছাকৃত হত্যা, (আট) ‘হারবী কাফেরকে ভ্রমবশতঃ হত্যা।

এসব প্রকারের মধ্যে কিছু সংখ্যকের বিধান পূর্বে বলা হয়েছে, আর কিছু পরে বর্ণিত হবে এবং কিছু সংখ্যকের বিধান হাদীসে উল্লেখিত রয়েছে। প্রথম প্রকারের পার্থিব বিধান অর্থাৎ, কেসাস ওয়াজিব হওয়া সূরা বাক্বারায় উল্লেখ করা হয়েছে এবং পরলৌকিক বিধান পরবর্তী আয়াত وَمَن يَقْتُلْ –এ বর্ণিত হবে। দ্বিতীয় প্রকারের বর্ণনা وَهُوَ مُؤْمِنٌ فَتَحْرِيرُ رَقَبَةٍ থেকে وَمَا كَانَ لِمُؤْمِنٍ আয়াতে আসবে। তৃতীয় প্রকারের বিধান দার-কুত্‌নীর হাদীসে বর্ণিত হয়েছে যে, যিম্মী হত্যার বিনিময়ে রসূলুল্লাহ্ (সল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) মুসলমানের কাছ থেকে কেসাস নিয়েছেন।– (তাখরীজে-হেদায়া)

চতুর্থ প্রকার وَإِن كَانَ مِن قَوْمٍ بَيْنَكُمْ وَبَيْنَهُم مِّيثَاقٌ আয়াতে উল্লেখিত হবে। পঞ্চম প্রকার পূর্ববর্তী রুকূর فَمَا جَعَلَ اللَّهُ لَكُمْ عَلَيْهِمْ سَبِيلًا বাক্যে বর্ণিত হয়েছে। ষষ্ঠ প্রকারের বিধান চতুর্থ প্রকারের সাথেই উল্লেখিত হয়েছে। কেননা, مِيثَاقٌ তথা চুক্তি অস্থায়ী ও স্থায়ী উভয় প্রকারই হতে পারে। অতএব, যিম্মীও অভয়প্রাপ্ত কাফেরের অন্তর্ভুক্ত। দুর্‌রে-মোখতার গ্রন্থের ‘দিয়্যত’ অধ্যায়ের শুরুতে অভয়প্রাপ্ত উভয়ই এর রক্ত-বিনিময় ওয়াজিব হওয়ার মাসআলা বিশুদ্ধভাবে প্রমাণ করা হয়েছে। সপ্তম ও অষ্টম প্রকারের বিধান স্বয়ং জেহাদ আইনসিদ্ধ হওয়ার মাসআলা থেকে পূর্বেই জানা গেল। কেননা, জেহাদে দারুল-‘হারবের কাফেরদেরকে ইচ্ছাকৃতভাবেই নিহত করা হয়। অতএব, ভ্রমবশতঃ হত্যার বৈধতা আরও সন্দেহাতীতরূপে প্রমাণিত হবে।– (বায়ানুল-কুরআন)

তিন প্রকার হত্যা ও তার বিধানঃ عمد প্রথম প্রকার অর্থাৎ, ইচ্ছাকৃত হত্যা। এর সংজ্ঞা এই বাহ্যতঃ ইচ্ছা করে এমন অস্ত্র দ্বারা হত্যা করা, যা লৌহনির্মিত অথবা অঙ্গচ্ছেদনের ব্যাপারে লৌহনির্মিত অস্ত্রের মত। যথা- ধারাল বাঁশ, ধারাল পাথর ইত্যাদি।

দ্বিতীয় প্রকার شبه العمد অর্থাৎ, ইচ্ছাকৃত হত্যার সাথে যা সাদৃশ্যপূর্ণ। এর সংজ্ঞা এইঃ ইচ্ছা করে হত্যা করা, কিন্তু এমন অস্ত্র দ্বারা নয়, যদ্দ্বারা অঙ্গচ্ছেদ হতে পারে।

তৃতীয় প্রকার خَطًا অর্থাৎ, ভ্রমবশতঃ হত্যা। ইচ্ছা ও ধারণায় ভ্রম হওয়া। যেমন, দূর থেকে মানুষকে শিকারী জন্তু কিংবা দারুল-     ‘হারবের কাফের মনে করে লক্ষ্য স্থির করতঃ গুলী করে ফেলা কিংবা লক্ষ্যচ্যুতি ঘটা। যেমন, জন্তুকে লক্ষ্য করেই তীর অথবা গুলী ছোঁড়া; কিন্তু তা কোন মানুষের গায়ে লেগে যাওয়া। এগুলো সব ভ্রমবশতঃ হত্যার অন্তর্ভুক্ত।

Share on facebook
Facebook
Share on twitter
Twitter
Share on linkedin
LinkedIn
সব বিভাগ