আন-নিসা, আয়াত ১১৪-১৫৪

পৃষ্ঠা নং-২৮৩

۞لَّا خَيۡرَ فِي كَثِيرٖ مِّن نَّجۡوَىٰهُمۡ إِلَّا مَنۡ أَمَرَ بِصَدَقَةٍ  أَوۡ مَعۡرُوفٍ أَوۡ إِصۡلَٰحِۢ بَيۡنَ ٱلنَّاسِۚ  وَمَن يَفۡعَلۡ ذَٰلِكَ  ٱبۡتِغَآءَ مَرۡضَاتِ ٱللَّهِ فَسَوۡفَ نُؤۡتِيهِ أَجۡرًا عَظِيمٗا ١١٤

১১৪.তাদের অধিকাংশ সলা-পরামর্শ ভাল নয়; কিন্তু যে সলা-পরামর্শ দান খয়রাত করতে কিংবা সৎকাজ করতে কিংবা মানুষের মধ্যে সন্ধিস্থাপন কল্পে করতো তা স্বতন্ত্র। যে একাজ করে আল্লাহর সন্তুষ্টির জন্যে আমি তাকে বিরাট ছওয়াব দান করব।

وَمَن  يُشَاقِقِ ٱلرَّسُولَ مِنۢ بَعۡدِ مَا تَبَيَّنَ لَهُ ٱلۡهُدَىٰ وَيَتَّبِعۡ غَيۡرَ  سَبِيلِ ٱلۡمُؤۡمِنِينَ نُوَلِّهِۦ مَا تَوَلَّىٰ وَنُصۡلِهِۦ جَهَنَّمَۖ  وَسَآءَتۡ  مَصِيرًا ١١٥

১১৫.যে কেউ রসূলের বিরুদ্ধাচারণ করে, তার কাছে সরল পথ প্রকাশিত হওয়ার পর এবং সব মুসলমানের অনুসৃত পথের বিরুদ্ধে চলে, আমি তাকে ঐ দিকেই ফেরাব যে দিক সে অবলম্বন করেছে এবং তাকে জাহান্নামে নিক্ষেপ করব। আর তা নিকৃষ্টতর গন্তব্যস্থান।

إِنَّ ٱللَّهَ لَا يَغۡفِرُ أَن يُشۡرَكَ بِهِۦ وَيَغۡفِرُ مَا دُونَ  ذَٰلِكَ لِمَن يَشَآءُۚ  وَمَن يُشۡرِكۡ بِٱللَّهِ فَقَدۡ ضَلَّ ضَلَٰلَۢا  بَعِيدًا ١١٦

১১৬.নিশ্চয় আল্লাহ তাকে ক্ষমা করেন না, যে তাঁর সাথে কাউকে শরীক করে। এছাড়া যাকে ইচ্ছা, ক্ষমা করেন। যে আল্লাহর সাথে শরীক করে সে সুদূর ভ্রান্তিতে পতিত হয়।

إِن يَدۡعُونَ مِن دُونِهِۦٓ إِلَّآ إِنَٰثٗا وَإِن يَدۡعُونَ  إِلَّا شَيۡطَٰنٗا مَّرِيدٗا ١١٧

১১৭.তারা আল্লাহকে পরিত্যাগ করে শুধু নারীর আরাধনা করে এবং শুধু অবাধ্য শয়তানের পূজা করে।

لَّعَنَهُ ٱللَّهُۘ  وَقَالَ لَأَتَّخِذَنَّ مِنۡ  عِبَادِكَ نَصِيبٗا مَّفۡرُوضٗا ١١٨

১১৮.যার প্রতি আল্লাহ অভিসম্পাত করেছেন। শয়তান বললঃ আমি অবশ্যই তোমার বান্দাদের মধ্য থেকে নির্দিষ্ট অংশ গ্রহণ করব।

وَلَأُضِلَّنَّهُمۡ وَلَأُمَنِّيَنَّهُمۡ  وَلَأٓمُرَنَّهُمۡ فَلَيُبَتِّكُنَّ ءَاذَانَ ٱلۡأَنۡعَٰمِ وَلَأٓمُرَنَّهُمۡ  فَلَيُغَيِّرُنَّ خَلۡقَ ٱللَّهِۚ  وَمَن يَتَّخِذِ ٱلشَّيۡطَٰنَ وَلِيّٗا مِّن  دُونِ ٱللَّهِ فَقَدۡ خَسِرَ خُسۡرَانٗا مُّبِينٗا ١١٩

১১৯.তাদেরকে পথভ্রষ্ট করব, তাদেরকে আশ্বাস দেব; তাদেরকে পশুদের কর্ণ ছেদন করতে বলব এবং তাদেরকে আল্লাহর সৃষ্ট আকৃতি পরিবর্তন করতে আদেশ দেব। যে কেউ আল্লাহকে ছেড়ে শয়তানকে বন্ধুরূপে গ্রহণ করে, সে প্রকাশ্য ক্ষতিতে পতিত হয়।

يَعِدُهُمۡ  وَيُمَنِّيهِمۡۖ  وَمَا يَعِدُهُمُ ٱلشَّيۡطَٰنُ إِلَّا غُرُورًا ١٢٠

১২০.সে তাদেরকে প্রতিশ্রুতি দেয় এবং তাদেরকে আশ্বাস দেয়। শয়তান তাদেরকে যে প্রতিশ্রুতি দেয়, তা সব প্রতারণা বৈ নয়।

  أُوْلَٰٓئِكَ  مَأۡوَىٰهُمۡ جَهَنَّمُ وَلَا يَجِدُونَ عَنۡهَا مَحِيصٗا ١٢١

১২১.তাদের বাসস্থান জাহান্নাম। তারা সেখান থেকে কোথাও পালাবার জায়গা পাবে না।

আনুষঙ্গিক জ্ঞাতব্য বিষয়:

পারস্পরিক সলাপরামর্শ মজলিসের উত্তম পন্থাঃ বলা হয়েছেঃ

لَّا خَيْرَ فِي كَثِيرٍ مِّن نَّجْوَاهُمْ

 অর্থাৎ, মানুষের যেসব পারস্পরিক সলা-পরামর্শ পরকালের ভাবনা ও চিন্তা বিবর্জিত শুধু ক্ষণস্থায়ী পার্থিব ও সাময়িক উপকার লাভের জন্য হয়ে থাকে, সেগুলোতে কোন মঙ্গল নেই।

এরপর বলা হয়েছেঃ

إِلَّا مَنْ أَمَرَ بِصَدَقَةٍ أَوْ مَعْرُوفٍ أَوْ إِصْلَاحٍ بَيْنَ النَّاسِ

 অর্থাৎ, এসব সলা-পরামর্শ ও কানাকানিতে মঙ্গলের কোন কিছু থাকলে তা হচ্ছে একে অপরকে দান-খয়রাতে উৎসাহিত করা কিংবা সৎকাজের আদেশ দেওয়া অথবা মানুষের মধ্যে পারস্পরিক শান্তি স্থাপনের পরামর্শ দান করা। এক হাদীসে বলা হয়েছেঃ মানুষের যেসব কথাবার্তায় আল্লাহ্‌র যিকির কিংবা সৎকাজের আদেশ ও অসৎ কাজের নিষেধ থাকে, সেগুলো ছাড়া সবই তাদের জন্য ক্ষতিকর।

مَعْرُوفٍ এমন কাজকে বলা হয়, যা শরীয়তে প্রশংসিত এবং যা শরীয়তপন্থীদের কাছে পরিচিত। এর বিপরীতে مُنْكَرْ ঐ কাজ, যা শরীয়তে অপছন্দনীয় এবং শরীয়তপন্থীদের কাছে অপরিচিত।

যে কোন সৎকাজের আদেশ এবং উৎসাহদান ‘আমর বিল-মারূফে’র অন্তর্ভুক্ত। উৎপীড়িতকে সাহায্য করা, অভাবীদের ঋণ দেয়া, পথভ্রান্তকে পথ বলে দেয়া ইত্যাদি সৎকাজও ‘আমর বিল-মারূফে’র অন্তর্ভুক্ত। সদকা এবং মানুষের পারস্পরিক শান্তিস্থাপন যদিও এর অন্তর্ভুক্ত; কিন্তু স্বতন্ত্রভাবে উল্লেখ করার কারণ এই যে, এতদুভয়ের উপকারিতা বহুলোকের মধ্যে বিস্তার লাভ করে এবং জাতীয় জীবন সংশোধিত হয়।

এ ছাড়া দুটি কাজ জনসেবার গুরুত্বপূর্ণ অধ্যায়সমূহকে পরিব্যপ্ত করে।

(এক) সৃষ্ট জীবের উপকার করা,

(দুই) মানুষকে দুঃখ-কষ্ট থেকে রক্ষা করা। সদকা উপকার সাধনের গুরুত্বপূর্ণ অধ্যায় এবং মানুষের মধ্যে সন্ধি স্থাপন করা, সৃষ্টজীবকে ক্ষতির কবল থেকে রক্ষা করার সর্বপ্রধান মাধ্যম। তাই তাফসীরবিদগণ বলেনঃ এখানে সদকার অর্থ ব্যাপক। ওয়াজিব সদকা, জাকাত, নফল সদকা এবং যে কোন উপকার এর অন্তর্ভুক্ত।

শিরক ও কুফরের শাস্তি চিরস্থায়ী হওয়াঃ এখানে কেউ কেউ প্রশ্ন করে যে, কর্ম পরিমাণে শাস্তি হওয়া উচিত। মুশরিক ও কাফেররা যে শিরক ও কুফরের অপরাধ করে, তা সীমাবদ্ধ আয়ুষ্কালের মধ্যে করে। অতএব, এর শাস্তি অনন্তকাল স্থায়ী হবে কেন? উত্তর এই যে, কাফের ও মুশরিকরা কুফর ও শিরককে অপরাধই মনে করে না; বরং পুণ্যের কাজ বলে মনে করে। তাই তাদের ইচ্ছা ও সংকল্প এটাই থাকে যে, চিরকাল এ অবস্থার উপরই কায়েম থাকবে। মৃত্যুর মুহুর্ত পর্যন্ত যখন সে এ অবস্থার উপর কায়েম থাকে, তখন সে নিজ সাধ্যের সীমা পর্যন্ত চিরস্থায়ী অপরাধ করে নেয়। তাই শাস্তিও চিরস্থায়ী হবে।

জুলুম ও অবিচার তিন প্রকারঃ এক প্রকার জুলুম আল্লাহ্ তাআলা কখনও ক্ষমা করবেন না। দ্বিতীয় প্রকার জুলুম মাফ হতে পারে। তৃতীয় প্রকার জুলুমের প্রতিশোধ আল্লাহ্ তাআলা না নিয়ে ছাড়বেন না।

প্রথম প্রকার জুলুম হচ্ছে শিরক, দ্বিতীয় প্রকার আল্লাহ্‌র হকে ত্রুটি করা এবং তৃতীয় প্রকার বান্দার হক বিনষ্ট করা। -(ইবনে-কাসীর)

Share on facebook
Facebook
Share on twitter
Twitter
Share on linkedin
LinkedIn
সব বিভাগ