আন নিসা, আয়াত ৭৬-৯১

পৃষ্ঠা নং-২৭৩

إِلَّا الَّذِينَ يَصِلُونَ –শান্তি চুক্তির সময় তাদের ব্যতিক্রম বিদ্যমান রয়েছে। দ্বিতীয় রেওয়ায়েতে তাদের শান্তিচুক্তি উল্লেখিত হয়েছে। ব্যতিক্রমকে জোরদার করার জন্য পুনরায় فَإِنِ اعْتَزَلُوكُمْ বলে দেয়া হয়েছে।

তৃতীয় রেওয়ায়েতে বর্ণিত লোকদের সম্পর্কে চতুর্থ আয়াত অর্থাৎ, …… سَتَجِدُونَ آخَرِينَ –এ বর্ণনা করা হয়েছে যে, তারা যদি তোমাদের থেকে নিবৃত্ত না হয়; বরং লড়াই করে, তবে তোমরা তাদের বিরুদ্ধে জেহাদ কর। এ থেকে বোঝা যায় যে, তারা সন্ধিচুক্তি করলে তাদের সাথে যুদ্ধ করবে না।–(বায়ানুল-কুরআন)

মোটকথা, এখানে তিন দল লোকের কথা উল্লেখিত হয়েছেঃ

(১) মুসলমান হওয়ার জন্যে যে সময় হিজরত করা শর্ত সাব্যস্ত হয়, সে সময় সামর্থ্য থাকা সত্ত্বেও যারা হিজরত না করে কিংবা হিজরত করার পর দারুল ইসলাম ত্যাগ করে দারুল ‘হারবে চলে যায়।

(২) যারা স্বয়ং মুসলমানদের সাথে ‘যুদ্ধ নয়’ চুক্তি করে কিংবা এরূপ চুক্তিকারীদের সাথে চুক্তি করে।

(৩) যারা সাময়িকভাবে বিপদ থেকে আত্মরক্ষার উদ্দেশ্যে শান্তিচুক্তি করে অতঃপর মুসলমানদের বিরুদ্ধে যুদ্ধ করার আহবান জানানো হলে তাতে অংশগ্রহণ করে এবং চুক্তিতে কায়েম না থাকে।

প্রথম দল সাধারণ কাফেরদের মত। দ্বিতীয় দল হত্যা ও ধরপাকড়ের আওতা বহির্ভুত এবং তৃতীয় দল প্রথম দলের অনুরূপ শাস্তির যোগ্য। এসব আয়াতে মোট দু’টি বিধান উল্লেখিত হয়েছে; অর্থাৎ, সন্ধিচুক্তি না থাকা কালে যুদ্ধ এবং সন্ধিচুক্তি থাকাকালে যুদ্ধ নয়।

হিজরতের বিভিন্ন প্রকার ও বিধানঃ حَتَّىٰ يُهَاجِرُوا فِي سَبِيلِ اللَّهِ ۚ –ইসলামের প্রাথমিক যুগে কাফেরদের দেশ থেকে হিজরত করা প্রত্যেক মুসলমানদের উপর ফরয ছিল। (১) এ কারণে যারা এ ফরয পরিত্যাগ করত, তাদের সাথে আল্লাহ্ তাআলা মুসলমানদের মত ব্যবহার করতে নিষেধ করে দেন। মক্কা বিজিত হলে রসূলুল্লাহ্ (সল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) ঘোষণা করেনঃ لا هجرة بعد الفتح অর্থাৎ, মক্কা বিজিত হয়ে যখন দারুল ইসলাম হয়ে গেল, তখন সেখান থেকে হিজরত করা ফরয নয়।–(বোখারী) এটা ছিল তখনকার কথা, যখন হিজরত ঈমানের শর্ত ছিল। তখন সামর্থ্য থাকা সত্ত্বেও যে ব্যক্তি হিজরত করত না, তাকে মুসলমান মনে করা হত না। কিন্তু পরে এ বিধান রহিত হয়ে যায়।

দ্বিতীয় প্রকার হিজরত কেয়ামত পর্যন্ত বাকী থাকবে। এ সম্পর্কে হাদীসে বলা হয়েছেঃ لا تنقطع الهجرة حتى تنقطع التوبة অর্থাৎ, যতদিন তাওবা কবুল হওয়ার সময় থাকবে, ততদিন হিজরত বাকী থাকবে।–(বোখারী)

এ হিজরত সম্পর্কে বোখারীর টীকাকার আল্লামা আইনী লিখেনঃ “স্থায়ী হিজরতের অর্থ হচ্ছে পাপকর্ম পরিত্যাগ করা।” যেমন, এক হাদীসে রসূলুল্লাহ্ (সল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) বলেনঃ المهاجر من هجر ما نهى الله عنه অর্থাৎ, ঐ ব্যক্তি মুহাজির, যে আল্লাহ্‌র নিষিদ্ধ বিষয় বর্জন করে। -(মেরকাত, প্রথম খণ্ড)

এ আলোচনা থেকে জানা গেল যে, পরিভাষায় হিজরত দু’অর্থে ব্যবহৃত হয়- (১) ধর্মের খাতিরে দেশ ত্যাগ করা; যেমন সাহাবায়ে কেরাম স্বদেশ মক্কা ছেড়ে মদীনা ও আবিসিনিয়ায় চলে যান। (২) পাপ কাজ বর্জন করা।

وَلَا تَتَّخِذُوا مِنْهُمْ وَلِيًّا وَلَا نَصِيرًا –এ আয়াত থেকে জানা যায় যে, কাফেরদের কাছে সাহায্য প্রার্থনা করা হারাম। বর্ণিত আছে যে, আনসাররা রসূলুল্লাহ্ (সল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম)-এর কাছে কাফেরদের বিরুদ্ধে ইহুদীদের কাছে থেকে সাহায্য চাওয়ার অনুমতি প্রার্থনা করলে তিনি বললেনঃ

এরা দুরাচারী জাতি। তাদের প্রয়োজন আমাদের নেই।–(মাযহারী, ২য় খণ্ড)

Share on facebook
Facebook
Share on twitter
Twitter
Share on linkedin
LinkedIn
সব বিভাগ