পৃষ্ঠা নং-২১২
وَلَئِن مُّتُّمۡ أَوۡ قُتِلۡتُمۡ لَإِلَى ٱللَّهِ تُحۡشَرُونَ ١٥٨
১৫৮. আর তোমরা মৃত্যুই বরণ কর অথবা নিহতই হও, অবশ্য আল্লাহ তা’আলার সামনেই সমবেত হবে।
فَبِمَا رَحۡمَةٖ مِّنَ ٱللَّهِ لِنتَ لَهُمۡۖ وَلَوۡ كُنتَ فَظًّا غَلِيظَ ٱلۡقَلۡبِ لَٱنفَضُّواْ مِنۡ حَوۡلِكَۖ فَٱعۡفُ عَنۡهُمۡ وَٱسۡتَغۡفِرۡ لَهُمۡ وَشَاوِرۡهُمۡ فِي ٱلۡأَمۡرِۖ فَإِذَا عَزَمۡتَ فَتَوَكَّلۡ عَلَى ٱللَّهِۚ إِنَّ ٱللَّهَ يُحِبُّ ٱلۡمُتَوَكِّلِينَ ١٥٩
১৫৯. আল্লাহর রহমতেই আপনি তাদের জন্য কোমল হৃদয় হয়েছেন পক্ষান্তরে আপনি যদি রাগ ও কঠিন হৃদয় হতেন তাহলে তারা আপনার কাছ থেকে বিচ্ছিন্ন হয়ে যেতো। কাজেই আপনি তাদের ক্ষমা করে দিন এবং তাদের জন্য মাগফেরাত কামনা করুন এবং কাজে কর্মে তাদের পরামর্শ করুন। অতঃপর যখন কোন কাজের সিদ্ধান্ত গ্রহণ করে ফেলেন, তখন আল্লাহ তা’আলার উপর ভরসা করুন আল্লাহ তাওয়াক্কুল কারীদের ভালবাসেন।
إِن يَنصُرۡكُمُ ٱللَّهُ فَلَا غَالِبَ لَكُمۡۖ وَإِن يَخۡذُلۡكُمۡ فَمَن ذَا ٱلَّذِي يَنصُرُكُم مِّنۢ بَعۡدِهِۦۗ وَعَلَى ٱللَّهِ فَلۡيَتَوَكَّلِ ٱلۡمُؤۡمِنُونَ١٦٠
১৬০. যদি আল্লাহ তোমাদের সহায়তা করেন, তাহলে কেউ তোমাদের উপর পরাক্রান্ত হতে পারবে না। আর যদি তিনি তোমাদের সাহায্য না করেন, তবে এমন কে আছে, যে তোমাদের সাহায্য করতে পারে? আর আল্লাহর ওপরই মুসলমানগনের ভরসা করা উচিত।
وَمَا كَانَ لِنَبِيٍّ أَن يَغُلَّۚ وَمَن يَغۡلُلۡ يَأۡتِ بِمَا غَلَّ يَوۡمَ ٱلۡقِيَٰمَةِۚ ثُمَّ تُوَفَّىٰ كُلُّ نَفۡسٖ مَّا كَسَبَتۡ وَهُمۡ لَا يُظۡلَمُونَ ١٦١
১৬১. আর কোন বিষয় গোপন করে রাখা নবীর কাজ নয়। আর যে লোক গোপন করবে সে কিয়ামতের দিন সেই গোপন বস্তু নিয়ে আসবে। অতঃপর পরিপূর্ণভাবে পাবে প্রত্যেকে, যা সে অর্জন করেছে। আর তাদের প্রতি কোন অন্যায় করা হবে না।
أَفَمَنِ ٱتَّبَعَ رِضۡوَٰنَ ٱللَّهِ كَمَنۢ بَآءَ بِسَخَطٖ مِّنَ ٱللَّهِ وَمَأۡوَىٰهُ جَهَنَّمُۖ وَبِئۡسَ ٱلۡمَصِيرُ ١٦٢
১৬২. যে লোক আল্লাহর ইচ্ছার অনুগত, সে কি ঐ লোকের সমান হতে পারে, যে আল্লাহর রোষ অর্জন করেছে? বস্তুতঃ তার ঠিকানা হল দোযখ। আর তা কতইনা নিকৃষ্ট অবস্থান!
هُمۡ دَرَجَٰتٌ عِندَ ٱللَّهِۗ وَٱللَّهُ بَصِيرُۢ بِمَا يَعۡمَلُونَ ١٦٣
১৬৩. আল্লাহর নিকট মানুষের মর্যাদা বিভিন্ন স্তরের আর আল্লাহ দেখেন যা কিছু তারা করে।
لَقَدۡ مَنَّ ٱللَّهُ عَلَى ٱلۡمُؤۡمِنِينَ إِذۡ بَعَثَ فِيهِمۡ رَسُولٗا مِّنۡ أَنفُسِهِمۡ يَتۡلُواْ عَلَيۡهِمۡ ءَايَٰتِهِۦ وَيُزَكِّيهِمۡ وَيُعَلِّمُهُمُ ٱلۡكِتَٰبَ وَٱلۡحِكۡمَةَ وَإِن كَانُواْ مِن قَبۡلُ لَفِي ضَلَٰلٖ مُّبِينٍ ١٦٤
১৬৪. আল্লাহ ঈমানদারদের উপর অনুগ্রহ করেছেন যে, তাদের মাঝে তাদের নিজেদের মধ্য থেকে নবী পাঠিয়েছেন। তিনি তাদের জন্য তাঁর আয়াতসমূহ পাঠ করেন। তাদেরকে পরিশোধন করেন এবং তাদেরকে কিতাব ও কাজের কথা শিক্ষা দেন। বস্তুতঃ তারা ছিল পূর্ব থেকেই পথভ্রষ্ট।
أَوَلَمَّآ أَصَٰبَتۡكُم مُّصِيبَةٞ قَدۡ أَصَبۡتُم مِّثۡلَيۡهَا قُلۡتُمۡ أَنَّىٰ هَٰذَاۖ قُلۡ هُوَ مِنۡ عِندِ أَنفُسِكُمۡۗ إِنَّ ٱللَّهَ عَلَىٰ كُلِّ شَيۡءٖ قَدِيرٞ ١٦٥
১৬৫. যখন তোমাদের উপর একটি মুসীবত এসে পৌছাল, অথচ তোমরা তার পূর্বেই দ্বিগুণ কষ্টে পৌছে গিয়েছ, তখন কি তোমরা বলবে, এটা কোথা থেকে এল? তাহলে বলে দাও, এ কষ্ট তোমাদের উপর পৌছেছে তোমারই পক্ষ থেকে। নিশ্চয়ই আল্লাহ প্রত্যেক বিষয়ের উপর ক্ষমতাশীল।
আনুষঙ্গিক জ্ঞাতব্য বিষয়ঃ
ওহুদ যু্দ্ধে কোন কোন সাহাবীর যে পদস্খলন এবং তাঁদের যুদ্ধ ক্ষেত্র ছেড়ে চলে যাওয়ার দরুন হুযূরে আকরাম (সাঃ) অন্তরে যে আঘাত পেয়েছিলেন যদিও স্বভাবসিদ্ধ ক্ষমা, করুণা ও চারিত্রিক কোমলতার দরুন তিনি সেজন্য সাহাবিগণের প্রতি কোন প্রকার ভর্ৎসনা করেননি এবং কোন রকম কঠোরতাও অবলম্বন করেননি। কিন্তু আল্লাহ্ তাআলা তাঁর রসূলের (সাঃ) সঙ্গী-সাথীগণের মনস্তুষ্টির উদ্দেশ্যে এবং এই ভুলের দরুন তাঁদের মনে যে দুঃখ ও অনুতাপ হয়েছিল, সে সমস্ত বিষয় ধুয়ে মুছে পরিষ্কার করে দেয়ার লক্ষ্যেই আয়াতে মহানবী (সাঃ)-কে অধিকতর কোমলতা ও করুণা প্রদর্শনের হেদায়াত করা হয়েছে এবং কাজে-কর্মে সাহাবায়ে কেরামের পরামর্শ গ্রহণের নির্দেশ দেয়া হয়েছে।
মুর্শিদ ও অভিভাবকদের কয়েকটি গুণঃ যে সাহাবায়ে (রাঃ) হুযুরে আকরাম (সাঃ)-এর প্রতি নিবেদিতপ্রাণ ছিলেন এবং যারা তাঁকে নিজেদের জান-মাল অপেক্ষা অধিক প্রিয়জ্ঞান করতেন, তাঁর হুকুমের বিরুদ্ধে যখন তাঁদের দ্বারা একটি পদস্খলন ঘটে যায়, তখন একদিকে নিজেদের পদস্খলন ও বিরুদ্ধাচরণের ব্যাপারে অবহিত হওয়ার পর তাঁদের অনুতাপ সীমাহীনভাবে বেড়ে যাওয়ার আশঙ্কা ছিল, যা তাঁদের মন-মস্তিষ্ককে সম্পূর্ণভাবে অকেজো করে দিতে পারতো কিংবা তাদেরকে আল্লাহ্ তা’আলার রহমত থেকে নিরাশ করে তুলতে পারতো। এরই প্রতিকারে পূর্ববর্তী আয়াতে বলা হয়েছে فَأَثَابَكُمْ غَمًّا بِغَمٍّ এই পদস্খলনের শাস্তি দুনিয়াতেই দেওয়া হয়ে গেছে; আখেরাতের পাতা পরিষ্কার।
অপরদিকে এই ত্রুটি ও পদস্খলনের ফলে রসূল-কারীম (সাঃ) আহত হয়ে পড়েন এবং দৈহিক কষ্টও হয়। আত্মিক কষ্ট তো পূর্ব থেকেই ছিল। কাজেই দৈহিক ও আত্মিক কষ্টের কারণে সাহাবিগণের প্রতি অবিশ্বাস সৃষ্টি হয়ে যাওয়ারও সম্ভাবনা ছিল, যা তাঁদের হেদায়াত ও দীক্ষার পথে অন্তরায় হতে পারতো। সেজন্যে মহানবী (সাঃ) –কে এই শিক্ষা দেয়া হয়েছে যে, আপনি তাঁদের পদস্খলন ও ত্রুটি-বিচ্যুতিসমূহ ক্ষমা করে দিন এবং ভবিষ্যতের জন্যও তাদের সাথে সদ্ব্যবহার করতে থাকুন।
এ বিষয়টিকে আল্লাহ্ রব্বুল আলামীন এক বিস্ময়কর বর্ণনাভঙ্গির মাধ্যমে বিবৃত করেছেন যাতে প্রসঙ্গক্রমে কয়েকটি অতিগুরুত্বপূর্ণ বিষয়ও অন্তর্ভুক্ত হয়েছে।
(এক) – হযূরে আকরাম (সাঃ)-কে এসব বিষয়ের নির্দেশ এমন ভঙ্গিতে দেয়া-হয়েছে যাতে তাঁর প্রশংসা ও গুণ-বৈশিষ্ট্যর বিকাশও ঘটে যে, এসব গুণ-বৈশিষ্ট্য পূর্ব থেকেই আপনার মাঝে বিদ্যমান ছিল।
(দুই) –এর আগে فَبِمَا رَحْمَةٍ শব্দটি বাড়িয়ে বাতলে দেয়া হয়েছে যে, এসব গুণ-বৈশিষ্ট পরিপূর্ণভাবে আপনার মধ্যে থাকা আমারই রহমতের ফলশ্রুতি, কারো ব্যক্তিগত পরাকাষ্ঠা নয়। তদুপরি রহমত শব্দটিকে সাধারণভাবে ব্যবহার করে রহমতের মহত্ত্ব ও ব্যাপকতার প্রতি ইঙ্গিত করা হয়েছে। এতে একথাও স্পষ্ট করে দেয়া হয়েছে যে, এ রহমত শুধু সাহাবায়ে কেরামের জন্যই নয়, বরং রসূলে-করীম (সাঃ)-এর জন্যও রয়েছে। সে কারণেই আপনাকে গুণ-বৈশিষ্ট্যের পরিপূর্ণতা দান করা হয়েছে।
অতঃপর তৃতীয় গুরুত্বপূর্ণ বিষয়টি পরবর্তী বাক্যগুলোর দ্বারা প্রকাশ-