পৃষ্ঠা নং-৮
কর, যাতে মানুষের সকল মকসুদ বা উদ্দেশ্য তার অন্তর্ভুক্ত থাকে। যথা, সরল পথ লাভ করা এবং দুনিয়ার যাবতীয় কাজে সরল-সঠিক পথ পাওয়া, যাতে কোথাও কোন ক্ষতি বা পদস্খলনের আশংকা না থাকে। মোটকথা, এখানে আল্লাহ্ তা‘আলার পক্ষ থেকে তাঁর তা’রীফ-প্রশংসা করার প্রকৃত উদ্দেশ্যই হল মানবকুলকে শিক্ষা দেয়া।
আল্লাহ্র তা’রীফ-প্রশংসা করা মানুষের মৌলিক দায়িত্ব:
এসূরার প্রথম বাক্যে আল্লাহ্র তা’রীফ বা প্রশংসা শিক্ষা দেয়া হয়েছে। তা’রীফ বা প্রশংসা সাধারণত: কোন গুণের বা প্রতিদানের পরিপ্রেক্ষিতে উল্লেখ হয়ে থাকে। কিন্তু এখানে কোন গুণের বা প্রতিদানের উল্লেখ নেই। এতে ইঙ্গিত করা হয়েছে যে, আল্লাহ্র নি‘আমত অগণিত। কোন মানুষ এর পরিমাপ করতে পারে না। কুরআনে ইরাশদ হয়েছে:
وَإِن تَعُدُّواْ نِعْمَةَ اللَّهِ لاَ تُحْصُوهَا অর্থাৎ, যদি তোমরা আল্লাহ্র নি’আমতের গণনা করতে চাও, তবে তা পারবে না। মানুষ যদি সারা বিশ্ব হতে মুখ ফিরিয়ে শুধুমাত্র নিজের অস্তিত্বের প্রতিই দৃষ্টি নিবদ্ধ করে, তবে বুঝতে পারবে যে, তার দেহই এমন একটি ক্ষুদ্র জগত যাতে বৃহৎ জগতের সকল নিদর্শন বিদ্যমান। তার দেহ যমীন তুল্য। কেশরাজি উদ্ভিদ তুল্য। তার হাড়গুলো পাহাড়ের মত এবং শিরা-উপশিরা যাতে রক্ত চলাচল করে, সেগুলো নদী-নালা বা সমুদ্রের নমুনা। দু’টি বস্তুর সংমিশ্রণে মানুষের অস্তিত্ব। একটি দেহ ও অপরটি আত্মা। এ কথাও স্বীকৃত যে, মানবদেহে আত্মা সর্বাপেক্ষা উত্তম অংশ আর তার দেহ হচ্ছে আত্মার অনুগত এবং অপেক্ষাকৃত নিকৃষ্ট মানের অধিকারী। এ নিকৃষ্ট অংশের পরীক্ষা-নিরীক্ষাকারী চিকিৎসকগণ বলেছেন যে, মানবদেহে আল্লাহ্ তা‘আলা পাঁচ হাজার প্রকার উপাদান রেখেছেন। এতে তিন শতেরও অধিক জোড়া রয়েছে। প্রত্যেকটি জোড়া আল্লাহ্র কুদরতে এমন সুন্দর ও মজবুতভাবে দেয়া হয়েছে যে, সর্বদা নড়া-চড়া করা সত্ত্বেও তার মধ্যে কোন পরিবর্তন হয় না এবং কোন প্রকার মেরামতরেও প্রয়োজন হয় না। সাধারণত: মানুষের বয়স ষাট-সত্তুর বছর হয়ে থাকে। এ দীর্ঘ সময় তার অঙ্গ-প্রত্যঙ্গগুলো সর্বদা নড়া-চড়া করছে, অথচ এর মধ্যে কোন পরিবর্তন দেখা যায় না। আল্লাহ্ তা‘আলা ইরশাদ করেছেনঃ نَحْنُ خَلَقْنٰهُمْ وَشَدَدْنَا أَسْرَهُمْ অর্থাৎ, ‘আমি মানুষকে সৃষ্টি করেছি এবং আমিই তাদের জোড়াগুলোকে মজবুত করেছি।’ এ কুদরতী মজবুতির পরিণাম হয়েছে এই যে, সাধারণভাবে তা অত্যন্ত নরম ও নড়বড়ে জোড়া সত্তুর বছর বা এর চাইতে অধিক সময় পর্যন্ত কর্মরত থাকে। মানুষের অঙ্গগুলোর মধ্যে শুধু চক্ষুর কথাই চিন্তা করলে দেখা যাবে, এতে আল্লাহ্ তা‘আলার অসাধারণ ‘হিকমত প্রকাশিত হয়েছে; সারা জীবন সাধনা করেও এ রহস্যটুকু উদ্ধার করা সম্ভব নয়।
এ চোখের এক পলকের কার্যক্রম লক্ষ্য করলে বুঝতে পারা যাবে যে, এর এক মিনিটের কার্যক্রমে আল্লাহ্ তা‘আলার কত নি‘আমত যে কাজ করছে, তা ভেবে অবাক হতে হয়্ কেননা চক্ষু খুলে এ দ্বারা কত বস্তুকে সে দেখছে। এতে যেভাবে চক্ষুর ভেতরের শক্তি কাজ করছে, অনুরূপভাবে বহির্জগতের সৃষ্টিরাজিও এতে বিশেষ অংশ নিচ্ছে। সূর্যের কিরণ না থাকলে চোখের দৃষ্টিশক্তি কোন কাজ করতে পারে না। সূর্যের জন্য আকাশের প্রয়োজন হয়। মানুষের দেখার জন্য এবং চক্ষু দ্বারা কাজ করার জন্য আহার্য ও বায়ুর প্রয়োজন হয়। এতে বুঝা যায়, চোখের এক পলকের শক্তির জন্য বিশ্বের সকল শক্তি ব্যবহৃত হয়। এ তো একবারের দৃষ্টি এখন দিনে কতবার দেখে এবং জীবনে কতবার দেখে তা হিসাব করা মানুষের শক্তির উর্ধ্বে। এমনিভাবে কান, জিহ্বা, হাত ও পায়ের যত কাজ এতে সমগ্র জগতের শক্তি যুক্ত হয়ে কার্য সমাধা হয়। এ সে মহা-দান যা প্রতিটি জীবিত মানুষ ভোগ করে। এতে রাজা-প্রজা, ধনী-দরিদ্রের কোন পার্থক্য নেই। তাছাড়া আল্লাহ্ তা‘আলার অসংখ্য নি‘আমত এমন ব্যাপকভাবে ছড়িয়ে রয়েছে যা প্রতিটি প্রাণী ভোগ করেও উপকৃত হয়। আকাশ-ভূমি এবং এ দু’টির মধ্যে সৃষ্ট সকল বস্তু চন্দ্র-সূর্য, গ্রহ-নক্ষত্র, বায়ূ প্রভৃতি প্রতিটি প্রাণীই উপভোগ করে।
এরপর আল্লাহ্র বিশেষ দান যা মানুষকে ‘হিকমতের তাকীদে কম-বেশী দেয়া হয়েছে, ধন-সম্পদ, মান-সম্মান, আরাম-আয়েশ সবই এর অন্তর্ভুক্ত। যদিও একথা অত্যন্ত মৌলিক যে, সাধারণ নি‘আমত যা সকল স্তরের মানুষের মধ্যে সমভাবে উপভোগ্য; যথা-আকাশ, বাতাস, জমীন এবং বিরাট এ প্রকৃতি, এ সমস্ত নি‘আমত বিশেষ নি’আমতের (যথা-ধন-সম্পদ) তুলনায় অধিক গুরুত্বপূর্ণ ও উত্তম। অথচ এসব নি‘আমত সকল মানুষের মধ্যে সমভাবে পরিব্যাপ্ত বলে, এত বড় নি‘আমতের প্রতি মানুষ দৃষ্টিপাত করে না। ভাবে, কি নি‘আমত। বরং আশপাশের সামান্য বস্তু যথা, আহার্য, পানীয়, বসবাসের নির্ধারিত স্থান, বাড়ী-ঘর প্রভৃতির প্রতিই তাদের দৃষ্টি সাধরণত: সীমাবদ্ধ থাকে।
মোটকথা, সৃষ্টিকর্তা মানবজাতির জীবন-ধারণ এবং দুনিয়ার জীবনে বেঁচে থাকার সুবিধার্থে যে অফুরন্ত নি‘আমত দান করেছেন, তার অতিঅল্পই এ প্রসঙ্গে বর্ণিত হয়েছে। সেই পরিপ্রেক্ষিতে মানুষের পক্ষে দুনিয়ার জীবনে চোখ মেলেই মুখ থেকে স্বতঃস্ফূর্তভাবে সেই মহান দাতার প্রশংসায় পঞ্চমুখ থাকা ছিল স্বাভাবিক। বলাবাহুল্য যে, মানবজীবনের সে চাহিদার প্রেক্ষিতে কুরআনের সর্বপ্রথম সূরার সর্বপ্রথম বাক্যে الْحَمْدُ ব্যবহার করা হয়েছে এবং সেই মহান সত্তার তা’রীফ ও প্রশংসাকে ‘ইবাদতের শীর্ষস্থানে রাখা হয়েছে।
রসূলুল্ল-হ (সল্লাল্ল-হু ‘আলাইহি ওয়াসাল্লাম) ইরশাদ করেছেন যে, আল্লাহ্ তা‘আলা তাঁর কোন নি‘আমত কোন বান্দাকে দান করার পর যখন সে الْحَمْدُ لِلّٰهِ বলে, তখন বুঝতে হবে, যা সে পেয়েছে, এ শব্দ তা অপেক্ষা অনেক উত্তম।
অন্য এক ‘হাদীসে বলা হয়েছে যে, কোন ব্যক্তি যদি বিশ্বচরাচরের সকল নি‘আমত লাভ করে এবং সেজন্য সে ‘আল্-’হাম্দু লিল্লাহ’ বলে, তবে বুঝতে হবে যে, সারা বিশ্বের নি‘আমতসমূহ অপেক্ষা তার الْحَمْدُ لِلّٰهِ বলা অপেক্ষা অতিউত্তম। [ক্বুরতুবী]
কোন কোন ‘আলিমের মন্তব্য উদ্ধৃত করে ক্বুরতুবী লিখেছেন যে, মুখে الْحَمْدُ لِلّٰهِ বলা একটি নি‘আমত এবং এ নি‘আমত সারা বিশ্বের সকল নি‘আমত অপেক্ষা উত্তম। স‘হীহ ‘হাদীসে আছে যে, الْحَمْدُ لِلّٰهِ পরকালের তৌলদন্ডের অর্ধেক পরিপূর্ণ করবে।
হযরত শফীক ইবনে ইব্রাহীম الْحَمْدُ -এর ফযীলত বর্ণনা প্রসঙ্গে বলেছেন যে, যখন আল্লাহ্ তা‘আলা তোমাদিগকে কোন নি‘আমত দান করেন, তখন প্রথমে দাতাকে জানো এবং পরে তিনি যা দান করেছেন তাতে সন্তুষ্ট থাক। আর তাঁর দেয়া শক্তি ও ক্ষমতা তোমাদের দেহে যতক্ষণ থাকে, ততক্ষণ পর্যন্ত তাঁর অবাধ্যতার নিকটেও যেও না।
পৃষ্ঠা নং-৯
দ্বিতীয় শব্দ أللّٰه -এর সাথে لام বর্ণটি যুক্ত। যাকে ‘আরবী ভাষার নিয়ম অনুযায়ী খাস لام বলা হয়। যা কোন আদেশ বা গুণের বিশেষত্ব বুঝায়। এখানে অর্থ হচ্ছে যে, শুধু তা’রীফ-প্রশংসাই মানবের কর্তব্য। বরং এ তা’রীফ-প্রশংসা তার অস্তিত্বের সাথে সংযুক্ত। বাস্তবপক্ষে তিনি ব্যতীত এ জগতে অন্য কেউ তা’রীফ-প্রশংসা পাওয়ার যোগ্য নয়। এর বিস্তারিত বর্ণনা পূর্বে করা হয়েছে। এতদসঙ্গে এও তাঁর নি‘আমত যে, মানুষকে চরিত্র গঠন শিক্ষাদানের জন্য এ আদেশ দেয়া হয়েছে যে, আমার নি‘আমতসমূহ যে সকল মাধ্যম অতিক্রম করে আসে, সেগুলোরও শুকরিয়া আদায় করতে হবে। আর যে ব্যক্তি ই‘হ্সানকারীর শুকরিয়া-কৃতজ্ঞতা জ্ঞাপন করে না সে বাস্তবপক্ষে আল্লাহ্ তা‘আলারও শুকরিয়া-কৃতজ্ঞতা আদায় করে না।
إِيّاكَ نَعبُدُ وَإِيّاكَ نَستَعينُ -এর অর্থ মুফাস্সিরকুল শিরোমণি হযরত ’আব্দুল্লাহ্ ইবনে ’আব্বাস (রদ্বিয়াল্ল-হু ‘আনহু) বলেছেন, আমরা তোমারই ‘ইবাদত করি, তুমি ব্যতীত অন্য কারো ‘ইবাদত করি না। আর তোমারই সাহায্য চাই, তুমি ব্যতীত অন্য কারো সাহায্য চাই না। [ইব্নে জারীর, ইব্নে আবী-হাতিম]
সাল্ফে স-লি‘হীনদের কেউ কেউ বলেছেন যে, সূরা ফা-তি’হা কুরআনের সারমর্ম এবং إِيّاكَ نَعبُدُ وَإِيّاكَ نَستَعينُ -সূরা ফা-তি’হার সারমর্ম। কেননা, এর প্রথম বাক্যে রয়েছে শির্ক্ থেকে মুক্তির ঘোষণা এবং দ্বিতীয় বাক্যে তার পরিপূর্ণ ও কুদরতের স্বীকৃতি। মানুষ দুর্বল, আল্লাহ্র সাহায্য ব্যতীত কোন কিছুই সে করতে পারে না। তাই সকল ব্যাপারে আল্লাহ্র উপর একান্তভাবে নির্ভর করা ব্যতীত তার গত্যন্তর নেই। এ উপদেশ কুরআনের বিভিন্ন স্থানে দেয়া হয়েছে।
(এক) আল্লাহ্ ব্যতীত অন্য কারো ‘ইবাদত জায়েয নয়: ইতিপূর্বে ‘ইবাদতের পরিচয় দেয়া হয়েছে। বলা হয়েছে যে, কোন সত্তার অসীমতা, মহত্ত্ব এবং তাঁর প্রতি ভালবাসার ভিত্তিতে, তাঁর সামনে অশেষ কাকুতি-মিনতি পেশ করার নামই ‘ইবাদত। আল্লাহ্ ব্যতীত অন্য কারো সাথে অনুরূপ আচরণ করাই শির্ক্। এতে বুঝা যাচ্ছে যে, মুর্তিপূজার মত প্রতীকপূজা বা পাথরের মুর্তিকে কুদরতী শক্তির আধার মনে করা বা কারো প্রতি সম্ভ্রম বা ভালবাসা এ পর্যায়ে পৌঁছে দেয়া, যা আল্লাহ্র জন্য করা হয়, তাও শির্কের অন্তর্ভুক্ত।
কোন বস্তুকে ‘হালাল-‘হারাম জানা থাকা সত্ত্বেও আল্লাহ্ ব্যতীত অন্য কারো কথাকে অবশ্য করণীয় মনে করে, তবে প্রকারান্তরে সে তার ’ইবাদতই করে এবং শির্কে পতিত হয়। সাধারণ মুসলমান যারা কুরআন, ‘হাদীস সরাসরি বুঝতে পারে না, শরী’আতের ‘হুকুম-আ’হকাম নির্ধারণের যোগ্যতাও রাখে না; এ জন্য কোন ইমাম, মুজতাহিদ, ‘আলিম বা মুফতীর কথার উপর বিশ্বাস রেখে কাজ করে; তাদের সাথে এ আয়াতের মর্মের কোন সম্পর্ক নেই। কেননা, প্রকৃতপক্ষে তারা কুরআন ও সুন্নাহ্ অনুযায়ী ‘আমল করে; আল্লাহ্র নিয়ম-বিধানেরই অনুকরণ করে। ‘আলিমগণের নিকট থেকে তারা আল্লাহ্র কিতাব ও রসূলের সুন্নাহ্র ব্যাখ্যা গ্রহণ করে মাত্র। কুরআনই তাদেরকে নির্দেশ দিয়েছে:
فَاسْأَلُوا أَهْلَ الذِّكْرِ إِنْ كُنْتُمْ لَا تَعْلَمُونَ
অর্থাৎ, ‘যদি আল্লাহ্র আদেশ তোমাদের জানা না থাকে, তবে ‘আলিমদের নিকট জেনে নাও।’
‘হালাল-‘হারাম নির্ধারণের ব্যাপারে আল্লাহ ব্যতীত অন্য যে কাউকেই অংশীদার করা শির্ক্। অনুরূপভাবে আল্লাহ্ ব্যতীত অন্য কারো নামে মান্নত করাও শির্ক্। প্রয়োজন মিটানো বা বিপদ মুক্তির জন্য আল্লাহ্ ব্যতীত অন্য কারো নিকট দু‘আ করাও শির্ক্। কেননা, ‘হাদীসে দু‘আকে ‘ইবাদতরূপে গণ্য করা হয়েছে। কাজেই যেসব কার্যকলাপে শির্কের নিদর্শন রয়েছে, সেসব কাজ করাও শির্কের অন্তুর্ভুক্ত। হযরত ‘আদী ইব্নে হাতিম বলেন, ইসলাম ক্ববূল করার পর আমি আমার গলায় ক্রস পরিহিত অবস্থায় রসূলুল্ল-হ (সল্লাল্ল-হু ‘আলাইহি ওয়াসাল্লাম)-এর দরবারে ইপস্থিত হয়েছিলাম। এটা দেখে রসূলুল্ল-হ (সল্লাল্ল-হু ‘আলাইহি ওয়াসাল্লাম) আদেশ করলেন, এ মূর্তিটা গলা থেকে ফেলে দাও। ‘আদী ইব্নে হাতিম যদিও ক্রস সম্পর্কে তখন নাসারাদের ধারণা পোষণ করতেন না, এতদসত্ত্বেও প্রকাশ্যভাবে শির্কের নিদর্শন থেকে বেঁচে থাকা অত্যাবশ্যকীয় বলে রসূলুল্ল-হ (সল্লাল্ল-হু ‘আলাইহি ওয়াসাল্লাম) তাকে এ নির্দেশ দিয়েছিলেন।
এমনিভাবে কারো প্রতি রুকূ’ বা সিজদা করা, বাইতুল্লাহ্ তথা আল্লাহ্র ঘর ‘কা’বা’ ব্যতীত অন্য কোন কিছুর তাওয়াফ করা শির্কের অন্তুর্ভুক্ত। এসব থেকে বেঁচে থাকার স্বীকারোক্তি এবং আনুগত্যের অঙ্গীকারই إِيّاكَ نَعبُدُ -তে করা হয়েছে।
কারো সাহায্য চাওয়ার বিষয়টি কিছুটা বিস্তারিত আলোচনা সাপেক্ষ। কেননা, বৈষয়িক সাহায্য তো একজন অপরজনের কাছ থেকে সব সময়ই নিয়ে থাকে। এ ছাড়া দুনিয়ার কাজ-কারবার চলতেই পারে না। যথা- প্রস্তুকারক, দিনমজুর, নির্মাতা, কর্মকার, কুম্ভকার প্রভৃতি সকল শ্রেণীর কারিগরই অন্যের সাহায্যে নিয়োজিত, অন্যের খেদমতে সর্বদা ব্যস্ত এবং প্রত্যেকেই তাদের সাহায্যপ্রার্থী ও সাহায্য গ্রহণে বাধ্য। এরূপ সাহায্য নেয়া কোন ধর্মমতে বা কোন শরী’আতেই নিষেধ নয়। কারণ, এ সাহায্যের সাথে আল্লাহ্ তা‘আলার নিকট প্রার্থিত সাহায্য কোন অবস্থাতেই সম্পৃক্ত নয়। অনুরূপভাবে কোন নাবী বা ওলীর বরাত দিয়েও আল্লাহ্ তা‘আলার সাহায্য প্রার্থনা করা কুরআনের নির্দেশ ও ‘হাদীসের বর্ণনায় বৈধ প্রমাণিত হয়েছে। এরূপ সাহায্য প্রার্থনাও আল্লাহ্র সম্পর্কযুক্ত সাহায্য প্রার্থনার অন্তর্ভুক্ত নয়, যা কুরআন ‘হাদীসে শির্কের অন্তুর্ভুক্ত করা হয়েছে।
আল্লাহ্র নিকট বিশেষভাবে সাহায্য দু’প্রকার:
এক, আল্লাহ্ ব্যতীত কোন ফেরেশতা, নাবী, ওলি বা কোন মানুষকে একক ক্ষমতাশালী বা একক ইচ্ছাশক্তির অধিকারী মনে করে তাদের নিকট কিছু চাওয়া, এটি প্রকাশ্য কুফরী। একে কাফির-মুশরিকরাও কুফরী বলে মনে করে। তারা নিজেদের দেবীদেরকেও আল্লাহ্র ন্যায় সর্বশক্তিমান একক ইচ্ছাশক্তির অধিকারী মনে করে না।
দুই, সাহায্য প্রার্থনার যে পন্থা কাফিরগণ গ্রহণ করে থাকে, কুরআন তাকে বাতিল ও শির্ক্ বলে ঘোষণা করেছে। তা হচ্ছে কোন ফেরেশতা, নাবী, ওলী বা দেবদেবী সম্পর্কে এমন ধারণা পোষণ করা যে,-
পৃষ্ঠা নং-১০
প্রকৃত শক্তি ও ইচ্ছার মালিক তো আল্লাহ্ তা‘আলাই, তবে তিনি তাঁর কুদরতে সে ক্ষমতা ও ইচ্ছাশক্তির কিছু অংশ অমুককে দিয়েছেন এবং এ ব্যাপারে তাকে ক্ষমতা দান করেছেন এবং সে ক্ষমতা প্রয়োগের ব্যাপারে সংশ্লিষ্ট ব্যক্তি সম্পূর্ণ স্বাধীন। কুরআনে وَإِيّاكَ نَستَعينُ দ্বারা বুঝানো হয়েছে যে, এরূপ সাহায্য আমরা আল্লাহ্ তা‘আলা ব্যতীত অন্য কারো নিকট চাইতে পারি না।