আল-মায়িদাহ, আয়াত ১-২

পৃষ্ঠা নং-৩০২

আল-মায়িদাহ-৫ মদীনায় অবতীর্ণ: আয়াত ১২০

بِسۡمِ اللَّهِ الرَّحۡمَٰنِ الرَّحِيمِ

শুরু করছি আল্লাহর নামে যিনি পরম করুণাময়, অতি দয়ালু।

يَٰٓأَيُّهَا الَّذِينَ ءَامَنُوٓاْ أَوۡفُواْ بِالۡعُقُودِۚ أُحِلَّتۡ لَكُم بَهِيمَةُ الۡأَنۡعَٰمِ إِلَّا مَا يُتۡلَىٰ عَلَيۡكُمۡ غَيۡرَ مُحِلِّي الصَّيۡدِ وَأَنتُمۡ حُرُمٌۗ إِنَّ اللَّهَ يَحۡكُمُ مَا يُرِيدُ ١

১. মুমিনগণ, তোমরা অঙ্গীকারসমূহ পূর্ন কর। তোমাদের জন্য চতুষ্পদ জন্তু হালাল করা হয়েছে, যা তোমাদের কাছে বিবৃত হবে তা ব্যতীত। কিন্তু এহরাম বাঁধা অবস্থায় শিকারকে হালাল মনে করো না! নিশ্চয় আল্লাহ তা‘আলা যা ইচ্ছা করেন, নির্দেশ দেন।

يَٰٓأَيُّهَا الَّذِينَ ءَامَنُواْ لَا تُحِلُّواْ شَعَٰٓئِرَ اللَّهِ وَلَا الشَّهۡرَ الۡحَرَامَ وَلَا الۡهَدۡيَ وَلَا الۡقَلَٰٓئِدَ وَلَآ ءَآمِّينَ الۡبَيۡتَ الۡحَرَامَ يَبۡتَغُونَ فَضۡلٗا مِّن رَّبِّهِمۡ وَرِضۡوَٰنٗاۚ وَإِذَاحَلَلۡتُمۡ فَاصۡطَادُواْۚ وَلَا يَجۡرِمَنَّكُمۡ شَنَـَٔانُ قَوۡمٍ أَن صَدُّوكُمۡ عَنِ الۡمَسۡجِدِ الۡحَرَامِ أَن تَعۡتَدُواْۘ وَتَعَاوَنُواْ عَلَى الۡبِرِّ وَالتَّقۡوَىٰۖ وَلَاتَعَاوَنُواْ عَلَى الۡإِثۡمِ وَالۡعُدۡوَٰنِۚ وَاتَّقُواْ اللَّهَۖ إِنَّ اللَّهَ شَدِيدُ الۡعِقَابِ ٢

২. হে মুমিনগণ! হালাল মনে করো না আল্লাহর নিদর্শনসমূহ এবং সম্মানিত মাসসমূহকে এবং ‘হারমে কুরবানীর জন্যে নির্দিষ্ট জন্তুকে এবং ঐসব জন্তুকে, যাদের গলায় কন্ঠাভরণ রয়েছে এবং ঐসব লোককে যারা সম্মানিত গৃহ অভিমুখে যাচ্ছে, যারা স্বীয় পালনকর্তার অনুগ্রহ ও সন্তুষ্টি কামনা করে। যখন তোমরা এহরাম থেকে বের হয়ে আস, তখন শিকার কর। যারা পবিত্র মসজিদ থেকে তোমাদেরকে বাঁধা প্রদান করেছিল, সেই সম্প্রদায়ের শুত্রুতা যেন তোমাদেরকে সীমালঙ্ঘনে প্ররোচিত না করে। সৎকর্ম ও খোদাভীতিতে একে অন্যের সাহায্য কর। পাপ ও সীমালঙ্ঘনের ব্যাপারে একে অন্যের সহায়তা করো না। আল্লাহকে ভয় কর। নিশ্চয় আল্লাহ তা‘আলা কঠোর শাস্তিদাতা।

(নোট: সূরা মায়িদাহ্‌র তাফসীর যেখান থেকে শুরু হয়েছে, তা পরিপূর্ণরূপে বুঝতে চাইলে সূরা আন-নিসা এর সর্বশেষ আয়াতটি সামনে রাখা ও তার অর্থ বোঝার প্রয়োজন হতে পারে। বিধায় উক্ত আয়াতটি মূল গ্রন্থের ৩০২ পৃষ্ঠায় এভাবে না থাকা সত্ত্বেও আপনাদের বোঝার সুবিধার্থে এখানে যোগ করে দেয়া হলো।

يَسۡتَفۡتُونَكَ قُلِ ٱللَّهُ يُفۡتِيكُمۡ فِي ٱلۡكَلَٰلَةِۚ إِنِ ٱمۡرُؤٌاْ هَلَكَ لَيۡسَ لَهُۥ وَلَدٞ وَلَهُۥٓ أُخۡتٞ فَلَهَا نِصۡفُ مَا تَرَكَۚ وَهُوَ يَرِثُهَآ إِن لَّمۡ يَكُن لَّهَا وَلَدٞۚ فَإِن كَانَتَا ٱثۡنَتَيۡنِ فَلَهُمَا ٱلثُّلُثَانِ مِمَّا تَرَكَۚ وَإِن كَانُوٓاْ إِخۡوَةٗ رِّجَالٗا وَنِسَآءٗ فَلِلذَّكَرِ مِثۡلُ حَظِّ ٱلۡأُنثَيَيۡنِۗ يُبَيِّنُ ٱللَّهُ لَكُمۡ أَن تَضِلُّواْۗ وَٱللَّهُ بِكُلِّ شَيۡءٍ عَلِيمُۢ ١٧٦

অর্থ: মানুষ আপনার নিকট ফতোয়া জানতে চায়। অতএব, আপনি বলে দিন, আল্লাহ তোমাদিগকে কালালাহ এর মীরাস সংক্রান্ত সুস্পষ্ট নির্দেশ বাতলে দিচ্ছেন, যদি কোন পুরুষ মারা যায় এবং তার কোন সন্তানাদি না থাকে এবং এক বোন থাকে, তবে সে পাবে তার পরিত্যাক্ত সম্পত্তির অর্ধেক অংশ এবং সে যদি নিঃসন্তান হয়, তবে তার ভাই তার উত্তরাধিকারী হবে। তার দুই বোন থাকলে তাদের জন্য পরিত্যক্ত সম্পত্তির দুই তৃতীয়াংশ। পক্ষান্তরে যদি ভাই ও বোন উভয়ই থাকে, তবে একজন পুরুষের অংশ দু’জন নারীর সমান। তোমরা বিভ্রান্ত হবে বলে আল্লাহ তোমাদিগকে সুস্পষ্টভাবে জানিয়ে দিচ্ছেন। আর আল্লাহ হচ্ছেন সর্ব বিষয়ে পরিজ্ঞাত।)

সূরাতুল মায়েদাহ

তফসীরের সার-সংক্ষেপ:

         يَسۡتَفۡتُونَكَ قُلِ ٱللَّهُ يُفۡتِيكُمۡ فِي ٱلۡكَلَٰلَةِۚ  এখানে আয়াতটি নাযিল হওয়ার কারণ এবং ‘কালালাহ্‌র’ হুকুম বর্ণনার মাধ্যমে কয়েকটি বিষয় জানা গেল।

প্রথমত: وَإِن تَكْفُرُوا فَإِنَّ لِلَّهِ مَا فِي السَّمَاوَاتِ وَمَا فِي الْأَرْضِ ۚ বলার পর দৃষ্টান্ত স্বরূপ আহলে-কিতাবদের অবস্থা বর্ণনা করা হয়েছে। তদ্রূপ فَاَمَّا الَّذِيْنَ أَمَنُوْا بِاللهِ وَاعْتَصَمُوْا আয়াতে রাসূলে কারীম (সা,)-এর সাহাবায়ে-কেরামের উদাহরণ পেশ করা হয়েছে যাতে করে ওহী হতে যারা পরান্মুখ তাদের পথভ্রষ্টতা ও সর্বনাশ এবং ওহীর আনুগত্য ও অনুসরণকারীদের সাফল্য ও সৌভাগ্য সুস্পষ্টভাবে উপলব্ধ করা যায়।

দ্বিতীয়ত: জানা গেল যে, আহলে-কিতাবরা আল্লাহ্ তা‘আলার পবিত্র সত্তার জন্য অংশীদার ও পুত্র সাব্যস্ত করার মত হীন মানসিকতাকে নিজেদের ঈমানের অঙ্গ বানিয়েছে। হঠকারিতার সাথে আল্লাহ্‌র ওহীর বিরুদ্ধাচরণ করেছে। অপর দিকে রসূলুল্লাহ্ (সা,)-এর সাহাবায়ে-কেরাম ধর্মীয় মূলনীতি ও এবাদত তো দূরের কথা লেন-দেন, আচার-ব্যবহার, বিবাহ-শাদী এমনকি মীরাস বন্টনের মত ব্যাপারেও নিজেদের বুদ্ধি-বৃত্তিকে যথেষ্ট মনে করতেন না, বরং সর্ব ব্যাপারেই রসূলুল্লাহ্ (সা,)-এর দিকে তাকিয়ে থাকতেন, ওহীর প্রতীক্ষা করতেন। যদি একবারে সান্তনা না পেতেন, তবে আবার রসূলুল্লাহ (সা,)-এর সমীপে হাযির হয়ে জানতে চাইতেন।

তৃতীয়ত: আরো বোঝা গেল যে, হযরত সাইয়্যেদুল-মুরসালীন (সা,) ওহীর হুকুম ছাড়া নিজের পক্ষ থেকে কোন আদেশ জারি করতেন না। যদি কোন ব্যাপারে পূর্ববর্তী ওহী না থাকতো, তবে তিনি ওহীর প্রতীক্ষা করতেন। এখানে আরো ইঙ্গিত করা হয়েছে যে, আহ্‌লে-কিতাবদের আবদার অনুসারে ওহী এক সাথে নাযিল না হয়ে যথা সময়ে অল্প-অল্প নাযিল হওয়া অতি উত্তম ছিল। কারণ, এমতাবস্থায় যে কোন ব্যক্তি নিজ নিজ প্রয়োজন অনুসারে প্রশ্ন করার সুযোগ পায় এবং ওহীর মাধ্যমে জবাব জানতে পারে। যেমন, অত্র আয়াতে এবং কোরআন মাজীদের আরো বহু আয়াতে তার নজীর দেখতে পাওয়া যায়।

এ ব্যবস্থাটি অধিক উপকারী ও কার্যকরী। তাছাড়া স্বয়ং আল্লাহ্ তা‘আলা কর্তৃক বান্দাকে স্মরণ ও সম্বোধন করা বান্দার জন্য অতি সৌভাগ্য ও গৌরবের বিষয় যা পূর্ববর্তী উম্মতগণ হাসিল করতে পারেনি।

Share on facebook
Facebook
Share on twitter
Twitter
Share on linkedin
LinkedIn
সব বিভাগ