একটি সুন্নাহকে বাঁচাবো বলে:১
মাওলানা আতিক উল্লাহ
বিসমিল্লাহির রাহমানির রাহীম
এক: আমরা পুরো মুসলিম উম্মাহ সংকটের মধ্য দিয়ে যাচ্ছি। এমনটা যে হবে, নবিজী (সা.) তার জীবদ্দশাতেই ভবিষ্যদ্বাণী করে গিয়েছিলেন। মুসলিম সমাজ আজ নানা দল-উপদলে বিভক্ত। বিভিন্ন বাদ-মতবাদ নিয়ে ব্যস্ত। প্রত্যেক দলই মনে করে করে, তারাই একমাত্র সঠিক দল, অন্যরা সবাই ভ্রান্ত!
দুই: এই যে সমস্যা, তার সমাধানও নবিজী (সা.) দিয়ে গেছেন:
ইরবাদ বিন সারিয়া বর্ণনা করেছেন:
নবিজী একদিন আমাদেরকে নসীহত করলেন। ফজরের পর। ভাষণটা ছিল অত্যন্ত সারগর্ভ। উপস্থিত শ্রোতাদের দু’চোখ বেয়ে অশ্রু ঝরছিল। সবার হৃদয় ভীত-সন্ত্রস্ত হয়ে উঠেছিল। একজন তো বলেই বসল:
এটা তো বিদায়ী ভাষণ!
নবীজি আমাদেরকে কী নির্দেশনা দিয়েছিলেন?
আমি তোমাদেরকে তাকওয়া অবলম্বনের আদেশ দিচ্ছি। আমি তোমাদেরকে (নেতার আদেশ) শোনা ও মানার আদেশ দিচ্ছি। সে নেতা হাবশী গোলাম হলেও তাকে মানবে। কেননা তোমাদের মধ্যে যারা বেঁচে থাকবে, তারা অনেক ঝগড়া-বিরোধ দেখবে।
তোমরা নিত্য-নতুন (বিদআত) বিষয়াবলী থেকে বেঁচে থাকবে। কেননা সেগুলো ভ্রান্ত। তোমরা যারা সে সময়টা পাবে, তারা যেন আমার সুন্নাহ আঁকড়ে ধরে। আমার হিদায়াতপ্রাপ্ত সুবু্িদ্ধসম্পন্ন খলীফাদের পথ আঁকড়ে ধরে। তোমরা তাদের পথকে মযবুতভাবে কামড়ে ধরে রাখবে।
তিন: নবিজীর (সা.) কথায় বোঝা গেল, সুন্নাতের অনুসরণের মাঝেই আমাদের মুক্তি নিহিত।
চার: আমরা এই সিলসিলায় চেষ্টা করবো, ফিকহি ও মাযহাবি ইখতিলাফ-মতভেদমুক্ত সুন্নাতসমূহ হাযির করতে। যাতে সবাই মানতে পারে। আমল করতে পারে।
পাঁচ: এই সফরে, আমাদের শে‘আর (স্লোগান) হবে:
ইন তুতীঊহু তাহতাদু (وَإِنْ تُطِيعُوهُ تَهْتَدُوا): যদি তার (নবিজীর) অনুসরণ করো, হিদায়াত পেয়ে যাবে (নূর:৫৪)।
তাহলীলের সুন্নাত:১
এক: তাহলীল মানে হলো, লা ইলাহা ইল্লাল্লাহ পড়া।
দুই: আবু হুরাইরা (রা.) বর্ণনা করেন:
যে ব্যক্তি দিনে একশ বার: ‘লা ইলাহা ইল্লাল্লাহু ওয়াহদাহু লা শারীকালাহু, লাহুল-মুলকু ওয়া লাহুল হামদু, ওয়া হুয়া আলা কুল্লি শাইয়িন কাদীর’
( لاَ إِلَهَ إِلَّا اللَّهُ، وَحْدَهُ لاَ شَرِيكَ لَهُ، لَهُ المُلْكُ وَلَهُ الحَمْدُ، وَهُوَ عَلَى كُلِّ شَيْءٍ قَدِيرٌ،)
বলবে, তার জন্যে আছে:
ক: দশটা গোলাম আযাদ করার সওয়াব।
খ: তার জন্যে একশটা নেকি লেখা হবে।
গ: তার একশটা গুনাহ মাফ করা হবে।
ঘ: তার জন্যে সেদিন সন্ধ্যা পর্যন্ত শয়তান থেকে সুরক্ষার ব্যবস্থা হবে।
ঙ: সেদিন তার চেয়ে শ্রেষ্ঠ আমলদার আর কেউ থাকবে না। তবে অন্য কেউ যদি এই আমলটা একাধিকবার করে, তার কথা আলাদা। (বুখারি ও মুসলিম)
তিন: এটি একটি অতীব মর্যাদাবান সুন্নাত। এটার অপরিমেয় প্রতিদানের কথা কল্পনাও করা যায় না। আরেকটা হাদীসের ভাবও এমন:
আমি (নবিজী) ও অন্য নবীগণ যেসব কথা বলেছি, তার মধ্যে শ্রেষ্ঠ কথা হলো উপরোক্ত দু‘আ।
চার: এই সুন্নাত আদায় করতে বড়জোর মিনিট দশেক সময় লাগবে। কিন্তু তার প্রাপ্তি অসাধারণ।
আল্লাহ তা‘আলা আমাদেরকে আমল করার তাওফীক দান করুন। আমীন।
একটি সুন্নাহকে বাঁচাবো বলে:২
(অন্যকে আহার করানো)
এক: অবদুল্লাহ বিন উমার (রা.) বর্ণনা করেছেন:
এক লোক নবিজীকে (সা.) প্রশ্ন করেছে: কোন ইসলাম উত্তম? তুমি আহার দান করবে। চিনে হোক না চিনে হোক, সালাম দিবে।
দুই: পরিবারের প্রয়োজন পুরো করার পর, উদ্বৃত্ত খাবার থাকলে তবেই অন্যকে আহার করাবে। যেমন: আশেপাশের গরীবকে, বাড়িতে আসা ভিক্ষুককে, মহল্লা পাহারা দেয়া প্রহরীকে, বাড়ির ঠিকা কাজের লোককে।
আবার বন্ধুবান্ধব, আত্মীয়স্বজন, পাড়া-প্রতিবেশি, সহকর্মীও এর আওতাভুক্ত হতে পারে।
তিন: হাদীসে গরীব মানুষকেই খাওয়াতে হবে এমনটা বলা হয়নি। বড়লোককে খাওয়ানোও সুন্নাত।
চার: হাদীসের মূল সুর হলো, পরস্পরের মধ্যে ভালোবাসা সৃষ্টি করা।
পাঁচ: সালাম দ্বারাও পরস্পর মিল-মহব্বত সৃষ্টি হয়। উভয় সুন্নাতের মাঝে একটা অদৃশ্য যোগসূত্র আছে।
আমাদের শি‘আর (স্লোগান) হলো:
ইন তুতীঊহু তাহতাদু (وَإِنْ تُطِيعُوهُ تَهْتَدُوا): যদি তার (নবিজীর) অনুসরণ করো, হিদায়াত পেয়ে যাবে (নূর:৫৪)।
ধারাবাহিকভাবে চলবে ইনশা-আল্লাহ…