(মাওলানা লাবীব আব্দুল্লাহ)
মুসলিম বিশ্বের বিশেষ কোনো মর্যদা নেই আধুনিক পৃথিবীতে৷ কেন নেই? কারণ অনেক৷ মুসলিম বিশ্বের আল্লাহর প্রতি বিশ্বাসের ঘাটতে রয়েছে৷ রয়েছে চারিত্রিক অবক্ষয়৷ নিজেদের কাছে মহামূল্যবান সম্পদ কুরআনে হাকীম থাকার পরও অন্যের দুয়ারের ভিখারী তারা৷ চিন্তা দর্শন ভিক্ষা তরে পশ্চিমাদের কাছে৷ মুসলিম বিশ্বের সমাজকাঠামো, চিন্তার ধরণ, আর্থিক লেনদেন, রাজনীতির পথ পদ্ধতি পশ্চিমা আদলে৷ পশ্চিমারা খৃস্টবাদের নানা বিজ্ঞানবিরোধী চিন্তাকে বাদ দিয়ে এগিয়ে গেছে৷ রেনেঁসা হয়েছে৷ হয়েছে জাগরণ৷ তবে এই জাগরণে ধর্মকে বাদ দিয়েছে তারা৷ তাদের উন্নতি পোপতন্ত্রকে বাদ দেওয়াও একটি কারণ৷ কিন্তু মুসলিম বিশ্বের উন্নতিটা সেই পথে নয়৷
মুসলমানদের শাসনের মডেল ছিলো খেলাফতে রাশেদা৷ নববী আদর্শ৷ উসওয়ায়ে হাসানা৷ কিন্তু মুসলিম শাসকরা খেলাফতের সোনালী পথ বাদ দিয়ে পশ্চিমাদের পথে চলার চেষ্টা করে অধঃপতনের গহবরে আজ৷ এই পতন হতেই থাকবে যদি খেলাফাহর পথে ফিরে না আসে৷ এখন আবার খেলাফাহর কথা বললে বোমাবাজ বাগদাদীর কথা মনে করতে পারে৷ আমি বাগদাদীর খেলাফতের কথা বলছি না৷ বলছি খেলাফাহ আলা মিনহাজিন নবুওয়াহ৷ ইমাম মাহদী না আসলে খেলাফত হবে না এটি একটি ভুল চিন্তা৷ এই উম্মাহ বৃষ্টির ফোটার মতো৷ প্রথম মাঝে এবং শেষে কল্যাণকর বারিবর্ষণ হতে পারে৷ ইমাম মাহদীর চিন্তাটা শিয়ারাও পোষণ করে৷ তারাই ইমাম বলে৷ মাহদী আল মুনতাজিরের চিন্তা৷ তাদের চিন্তায় তাঁর জন্ম হয়ে গেছে৷
আহলে সুন্নাহর চিন্তা তিনি আসবেন ঈসা আলাইহিস সালামের নুযুলের সময়৷ অনেক টিভি আলোচক বা অনেক ইসলামীধারার লোকজন মনে করেন আগামী কয়েক বছরের মধ্যেই হযরত মাহদীর প্রকাশ হবে৷ ইমাম মাহদী নিয়ে এইসব চিন্তায় গভীরতা কম৷ তিনি যথন আসবেন তখন আসবেন৷ দাজ্জালের অপেক্ষা কিন্তু ইহুদীরাও করছে৷ মাসীহে দাজ্জালের অপেক্ষায় আছে৷ দাজ্জালকে হত্যা করবেন হযরত ঈসা আলাইহিস সালাম৷ এটি আহলে সুন্নাহর চিন্তা৷
এই সময়ের অপেক্ষা করে করে দেশে দেশে মুসলিম উম্মাহকে রোহিঙ্গা বানানোর পরও একদল চিন্তায় আছেন আরও মাজলুম হতে হবে তাহলেই ইমাম মাহদী আসবেন৷
স্পেনের পতন, মোগলদের দিল্লি পতন, তাতারদের গণহত্যা, সিরিয়ায় যুদ্ধে লাখ লাখ মুসলমানদের উস্বাস্তু হওয়া, সম্প্রতি আরাকানে রোহিঙ্গাদের উপর গণহত্যার পরও কিন্তু হযরত মাহদীর কোনো ভূমিকা নেই৷ তিনি যখন আসবেন তখন আসবেন৷ আধুনিক যুগে এলে কি তিনি এটম বোম বা মাদার অফ বোমের মালিক হবেন? না কি তৃতীয় বিশ্বযুদ্ধে সব বোমা বিষ্ফোরণ হবার পর মানুষহীন নতুন পৃথিবীতে আসবেন তাও কিন্তু চিন্তার বিষয়৷
মুসলিম উম্মাহকে কোরআনের ভাষায় কুওয়াহর অধিকারী হতে হবে৷ মিন কুওয়াহ বলা হয়েছে কুরআনে৷
কুরআনের তাফসীরে কুওয়ার ব্যখ্যায় রামীর কথা বলা হয়েছে৷ সামরিক শক্তিতে বলিয়ানকে ফরজ বলা হয়েছে৷ মুসলিম বিশ্বের অবশ্যই সামরিক শক্তিতে এক নম্বরে থাকা উচিৎ ছিলো৷ কিন্তু কুওয়াহর অধিকারী না হয়ে অমুসলিমদের থেকে অস্ত্র ক্রয় করে মাথা উচুঁ করে দাঁড়াতে পারবে না মুসলিম উম্মাহ৷
হাদীসে কিয়ামতের কথা বলা হয়েছে৷ কিয়ামতের বিশ্বাসী হতেই হবে৷ মৌলিক বিশ্বাসের অন্তর্ভুক্ত মুসলিমের৷
কিয়ামতের আলামতের কথা বলা হয়েছে হাদীসে নববীতে৷
কিয়ামতের সব আলামত খারাপ নয়৷ কিয়ামত কবে হবে কেউ জানে না৷ অনুরুপ কেউ জানেন ইমাম মাহদী বা হযরত মাহদী কখন আসবেন৷ সুনির্দিষ্ট করে ইমাম মাহদীর কথা বলা বিভ্রান্তি৷ শায়খ কাজী ইবরাহীম সাহেব ইদানীং মাহদীর বিষয়টি সন তারিখ দিয়ে বলার চেষ্টা করছেন৷ তিনি হাদীসের এক ধরনের মনগড়া ব্যাখ্যা দিচ্ছেন৷ পৃথিবীতে কয়েক শত মাহদী দাবিদার প্রকাশিত হয়েছে৷ কয়েক দিন আগেই এক মাহদী পুলিশের হাতে গ্রেফতারও হয়েছে৷ সামনে আরও মিথ্যা মাহদী আসতে থাকবে৷
মুসলিম উম্মাহকে ওয়া আয়িদ্দু লাহুম মাসতাতাতুম মিন কুওয়াহ… এই আয়াতের বাস্তবায়ণ করে সামরিক ও বিজ্ঞান প্রযুক্তির শক্তিতে বিজয়ী থাকতে হবে৷ পরে হযরত মাহদীর চিন্তা৷ শুধু হযরত মাহদীর আত্মপ্রকাশ বা আগমনের চিন্তা করে হতাশ হওয়া মুসলিম বিশ্বের পতনের অন্যতম কারণ৷
উল্লেখ্য, আমি হাদীসকে বিশ্বাস করি আকল বা যুক্তি ছাড়াই৷ আমি বিশ্বাস করি সুন্নাহই মুক্তির পথ৷ কুরআনই মুক্তির রাজপথ৷
দেশে দেশে রোহিঙ্গা পরিস্থিতি থেকে মুক্তির জন্য প্রয়োজন মুসলিম উম্মাহর কুওয়াহর অধিকারী হওয়া৷ ঐক্যবদ্ধ হয়ে জেগে ওঠা৷
কুওয়াহর উপর আমল না করা মুসলিম উম্মাহর অন্যতম কারণ৷