রাসূল সাঃ তাঁর ফুপাতো ভাই আব্দুল্লাহ বিন জাহাশ রাঃ-কে আটজন সঙ্গীসহ একটি মিশনে প্রেরণ করেন ৷ গ্রুপ ক্যাপ্টেন আব্দুল্লাহ রাঃ-কে একটি পত্র দিয়ে রাসূল সাঃ বলেন, তুমি দু’দিন পথ চলার পর পত্র খুলবে ৷ পত্রে যে নির্দেশ দেয়া আছে তা অনুস্মরণ করবে৷
দু’দিন পথ চলার পর আব্দুল্লাহ রাঃ পত্র খুললেন ৷ পত্রে লেখা, ‘তুমি ‘নাখলা’য় গিয়ে অবস্থান করো ৷ কুরাইশের উপর নজরদারি করো ৷ এবং আমাকে তথ্য সর্বরাহ করো ৷ পত্র পড়ার পর তোমার সঙ্গীদের মধ্যে যে সেচ্চায় যেতে চায় তাকে সঙ্গে নিবে ৷ যে ফিরে আসতে চায় তাকে জোর করবে না ৷’
নাখ্লা হলো মক্কা-মদীনার মাঝে সীমান্ত এলাকা ৷ এবং ব্যবসায়ীক কাফেলা চলাচলের পথ ৷ সঙ্গীদের সকলে আব্দুল্লাহ রাঃ-এর নেতৃত্বে সম্মুখে এগিয়ে চললো ৷ নাখলায় পৌঁছে পর্যবেক্ষণ করতে লাগলো ৷
ঠিক তখন চার সদস্যের একটি কুরাইশ বনিকদল নাখলা হয়ে তায়েফ থেকে মক্কায় ফিরে আসছিলো ৷ তাদের সঙ্গে উঁট বোঝাই ব্যবসায়ীক পণ্যসামগ্রী রয়েছে ৷ তখন ছিলো হারাম মাসের শেষ দিন ৷ অর্থাৎ, যে চার মাসে সর্বসম্মতভাবে যুদ্ধ নিষিদ্ধ, ঐদিন ছিলো সেই নিষিদ্ধ মাসগুলোর সর্বশেষ দিন ৷ আর আরবী মাস শেষ হয় দিন শেষ হওয়ার মাধ্যমে ৷ শুরু হয় সূর্যাস্তের মাধ্যমে ৷
পর্যব্যক্ষণ টিমের প্রধান সঙ্গীদের নিয়ে মিটিংয়ে বসলেন ৷ আমরা যদি দিনে আক্রমণ করি তাহলে নিষিদ্ধ মাসে যুদ্ধ করা হবে ৷ আর যদি সন্ধ্যা পর্যন্ত অপেক্ষা করি তাহলে বনিক দল মক্কা পৌঁছে যাবে ৷ অতএব, এখনি আক্রমণ করা উত্তম হবে ৷ সকলে একমত হলেন ৷ বনিক দলের উপর হামলা করা হলো ৷
বনিক দলকে লক্ষ করে একটি তীর ছুড়া হলো ৷ তীরের আঘাতে একজন মারা গেলো ৷ একজন দৌড়ে পালাল ৷ বাকি দুজন বন্দী হল ৷ আব্দুল্লাহ রাঃ বন্দীদের ও মালপত্র রাসূল সঃ-এর দরবারে নিয়ে গেলেন ৷
রাসূল (সা:) বললেন, তোমরা এ কী করলে? আমি তো আক্রমণের নির্দেশ দেইনি ৷ শুধু তথ্য সর্বরাহ করতে বলেছি ৷ তোমরা তো নিষিদ্ধ মাসে যুদ্ধ করে বসলে ৷ তখন কুরাইশরা বলতে লাগলো, হে মুহাম্মাদ! নিষিদ্ধ মাসে যুদ্ধ করে আপনি মহা অন্যায় করেছেন ৷
প্রিয় পাঠক!
এখানে গল্প শুনানো উদ্দেশ্য ছিলো না ৷ উপরের ঘটনাকে কেন্দ্র করে যে আয়াত অবতীর্ণ হয়েছে তার একলাইন অনুবাদ শুনানোর জন্য ঘটনাটি টেনে আনতে হল ৷
উপরের ঘটনা কেন্দ্র করে মহান আল্লাহ আয়াত নাযিল করেন-
“তারা আপনাকে হারাম মাসে লড়াই সম্পর্কে জিজ্ঞেস করছে ৷ আপনি বলুন যে, হারাম মাসে লড়াই করা অপরাধ ৷ কিন্তু আল্লাহর পথ থেকে মানুষকে বাধা দেয়া, আল্লাহর সাথে কুফুরী করা, মসজিদে হারামে যেতে বাধা দেয়া, এবং হারামবাসীকে দেশ থেকে বের করে দেয়া আল্লাহর কাছে মস্তবড় অপরাধ ৷ আর ফিতনা সৃষ্টি করা হত্যাকাণ্ড’র চেয়ে গুরুতর ৷” [সূরা বাক্বারা-২১৭]
উপরের আয়াতকে আমরা বর্তমানের সাথে মিলিয়ে অনুবাদ করতে পারি যেমন-
তারা আপনাকে প্যারিস ও টুইনটাওয়ারে হামলা সম্পর্কে জিজ্ঞেস করে ৷ আপনি বলুন, হ্যাঁ, সেই হামলা ছিলো মানবাধিকার লঙ্গন৷ কিন্তু মুসলিমদের দেশে শরীয়ত প্রতিষ্ঠা করতে না দেয়া, মুসলিমদের উপর গণহত্যা চালানো, পবিত্র মক্বা-মদীনায় খ্রিষ্টান সৈন্যদের বসতি স্থাপন করা, ফিলিস্তিন ধ্বংস করে ইসরাইল সৃষ্টি করা, মুসলিম যুবকদের দেশান্তর করা সবচেয়ে বড় মানবাধিকার লঙ্গন৷ আর মুসলিম বিশ্বের উপর গণতন্ত্র চাপিয়ে দেয়া হত্যাকাণ্ডের চেয়ে গুরুতর ৷
অতএব, আমরা বলতে পারি যে, আবদুল্লাহ বিন জাহাশ রাঃ-এর হারাম মাসে অভিযানের ব্যাপারে প্রশ্ন করা যেমন মুনাফেকি ও নির্বুদ্ধিতার কাজ, তেমনি প্যারিস এবং ৯/১১ নিয়ে প্রশ্ন করা, সেখানে মানবাধিকারের প্রশ্ন তোলা নির্বুদ্ধিতা ও মুনাফেকির কাজ ৷
আল্লাহ আমাদের হেফাজত করুন ৷
[কৃতজ্ঞতাঃ একজন যাযাবর]