আল-বাকারা ১৮৮-২০৩

পৃষ্ঠা নং-৯৭

وَلَا تَأۡكُلُوٓاْ أَمۡوَٰلَكُم بَيۡنَكُم بِٱلۡبَٰطِلِ وَتُدۡلُواْ بِهَآ إِلَى ٱلۡحُكَّامِ لِتَأۡكُلُواْ فَرِيقٗا مِّنۡ أَمۡوَٰلِ ٱلنَّاسِ بِٱلۡإِثۡمِ وَأَنتُمۡ تَعۡلَمُونَ ١٨٨

১৮৮.তোমরা অন্যায়ভাবে একে অপরের সম্পদ ভোগ করো না। এবং জনগণের সম্পদের কিয়দংশ জেনে-শুনে পাপ পন্থায় আত্নসাৎ করার উদ্দেশে শাসন কতৃপক্ষের হাতেও তুলে দিও না।

۞يَسۡ‍َٔلُونَكَ عَنِ ٱلۡأَهِلَّةِۖ قُلۡ هِيَ مَوَٰقِيتُ لِلنَّاسِ وَٱلۡحَجِّۗ وَلَيۡسَ ٱلۡبِرُّ بِأَن تَأۡتُواْ ٱلۡبُيُوتَ مِن ظُهُورِهَا وَلَٰكِنَّ ٱلۡبِرَّ مَنِ ٱتَّقَىٰۗ وَأۡتُواْ ٱلۡبُيُوتَ مِنۡ أَبۡوَٰبِهَاۚ وَٱتَّقُواْ ٱللَّهَ لَعَلَّكُمۡ تُفۡلِحُونَ ١٨٩

১৮৯.তোমার নিকট তারা জিজ্ঞেস করে নতুন চাঁদের বিষয়ে। বলে দাও যে এটি মানুষের জন্য সময় নির্ধারণ এবং হজ্বের সময় ঠিক করার মাধ্যম। আর পেছনের দিক দিয়ে ঘরে প্রবেশ করার মধ্যে কোন নেকী বা কল্যাণ নেই। অবশ্য নেকী হল আল্লাহ্‌কে ভয় করার মধ্যে। আর তোমরা ঘরে প্রবেশ কর দরজা দিয়ে এবং আল্লাহ্‌কে ভয় করতে থাক যাতে তোমরা নিজেদের বাসনায় কৃতকার্য হতে পার।

وَقَٰتِلُواْ فِي سَبِيلِ ٱللَّهِ ٱلَّذِينَ يُقَٰتِلُونَكُمۡ وَلَا تَعۡتَدُوٓاْۚ إِنَّ ٱللَّهَ لَا يُحِبُّ ٱلۡمُعۡتَدِينَ ١٩٠

১৯০.আর লড়াই কর আল্লাহ্‌র ওয়াস্তে তাদের সাথে, যারা লড়াই করে তোমাদের সাথে। অবশ্য কারো প্রতি বাড়াবাড়ি করো না। নিশ্চয়ই আল্লাহ্‌ সীমালঙ্ঘনকারীদেরকে পছন্দ করেন না।

وَٱقۡتُلُوهُمۡ حَيۡثُ ثَقِفۡتُمُوهُمۡ وَأَخۡرِجُوهُم مِّنۡ حَيۡثُ أَخۡرَجُوكُمۡۚ وَٱلۡفِتۡنَةُ أَشَدُّ مِنَ ٱلۡقَتۡلِۚ وَلَا تُقَٰتِلُوهُمۡ عِندَ ٱلۡمَسۡجِدِ ٱلۡحَرَامِ حَتَّىٰ يُقَٰتِلُوكُمۡ فِيهِۖ فَإِن قَٰتَلُوكُمۡ فَٱقۡتُلُوهُمۡۗ كَذَٰلِكَ جَزَآءُ ٱلۡكَٰفِرِينَ ١٩١

১৯১.আর তাদেরকে হত্যাকর যেখানে পাও সেখানেই এবং তাদেরকে বের করে দাও সেখান থেকে যেখান থেকে তারা বের করেছে তোমাদেরকে। বস্তুতঃ ফেতনা ফ্যাসাদ বা দাঙ্গা-হাঙ্গামা সৃষ্টি করা হত্যার চেয়েও কঠিন অপরাধ। আর তাদের সাথে লড়াই করো না মসজিদুল হারামের নিকটে যতক্ষণ না তারা তোমাদের সাথে সেখানে লড়াই করে। অবশ্য যদি তারা নিজেরাই তোমাদের সাথে লড়াই করে। তাহলে তাদেরকে হত্যা কর। এই হল কাফেরদের শাস্তি।

فَإِنِ ٱنتَهَوۡاْ فَإِنَّ ٱللَّهَ غَفُورٞ رَّحِيمٞ ١٩٢

১৯২.আর তারা যদি বিরত থাকে, তাহলে আল্লাহ্‌ অত্যন্ত দয়ালু।

وَقَٰتِلُوهُمۡ حَتَّىٰ لَا تَكُونَ فِتۡنَةٞ وَيَكُونَ ٱلدِّينُ لِلَّهِۖ فَإِنِ ٱنتَهَوۡاْ فَلَا عُدۡوَٰنَ إِلَّا عَلَى ٱلظَّٰلِمِينَ ١٩٣

১৯৩.আর তোমরা তাদের সাথে লড়াই কর, যে পর্যন্ত না ফেতনার অবসান হয় এবং আল্লাহ্‌র দ্বীন প্রতিষ্ঠিত হয়। অতঃপর যদি তারা নিবৃত হয়ে যায় তাহলে কারো প্রতি কোন জবরদস্তি নেই, কিন্তু যারা যালেম (তাদের ব্যাপারে আলাদা)।

আনুসাঙ্গিক জ্ঞাতব্য বিষয়ঃ

আলোচ্য আয়াতে ‘হারাম পন্থায় সম্পদ অর্জন এবং ভোগ করার নিষিদ্ধতা বর্ণিত হয়েছে। যেমন, ইতিপূর্বে সূরা বাক্বারারই ১৬৮-তম আয়াতে ‘হালাল পন্থায় সম্পদ অর্জন এবং ভোগ করার নির্দেশ দেয়া হয়েছিল। পূর্ববতী সে আয়াতে বলা হয়েছিলঃ

“হে মানবমন্ডলী! জমিনের মধ্যে যা কিছু রয়েছে, তা থেকে তোমরা ‘হালাল ও পবিত্র বস্তু সমূহ খাও, আর শয়তানের পদাঙ্ক অনুসরন করো না। কেননা, সে তোমাদের প্রকাশ্য দুষমন।”

অনূরূপ সূরা-না‘হলে ইরশাদ হয়েছে-

“তোমাদেরকে আল্লাহ্‌ তা‘আলা যে পবিত্র ও ‘হালাল রুযী দান করেছেন, তা থেকে খাও এবং আল্লাহ্‌র নেয়ামতসমূহের শূকরিয়া আদায় কর, যদি তোমরা তাঁরই উপাসক হয়ে থাক।”

প্রথম আয়াতে সাহাবায়ে-কেরাম (রদ্বিয়াল্ল-হু ‘আনহুম আজমা‘য়ীন)- এর একটি প্রশ্ন এবং আল্লাহ্‌ তা‘আলার তরফ থেকে তাঁর জওয়াবের কথা উল্লেখ করা হয়েছে। মুফাসসিরকূল শিরোমণি হযরত ‘আব্দুল্লাহ ইবনে ‘আব্বাস (রদ্বিয়াল্ল-হু ‘আনহু) বলেন, সাহাবায়ে-কেরামের একটি প্রধান বৈশিষ্ট এই যে, তাঁরা রসূলুল্ল-হ (সল্লাল্ল-হু ‘আলাইহি ওয়াসাল্লাম)-এর সম্ভ্রম ও সমীহ বোধের কারনে খুব কমই প্রশ্ন করতেন। তাঁরা এক্ষেত্রে পূর্ববর্তী যামানার উম্মতদের ব্যতিক্রম ছিলেন। পূর্ববর্তী উম্মতগণ এ আদবের প্রতি সচেতন ছিল না। তাঁরা সব সময় নানা অবান্তর প্রশ্ন করতো। হযরত ‘আব্দুল্লাহ ইবনে ‘আব্বাস (রদ্বিয়াল্ল-হু ‘আনহু) বলেন, সাহাবীগণের যেসব প্রশ্নের উল্লেখ কুরআন মাজীদে বিদ্যমান রয়েছে, তা সংখ্যায় মাত্র চৌদ্দটি। এ চৌদ্দটি প্রশ্নের মধ্যে একটি প্রশ্ন وَ اِذَا سَاَلَکَ عِبَادِیْ عَنِّیْ ( যখন আমার বান্দাগণ আমার সম্পর্কে তোমার কাছে প্রশ্ন করে।) দ্বিতীয় প্রশ্নটি আলোচ্য চন্দ্রের হ্রাস-বৃদ্ধি সম্পর্কিত। এই দু’টি ছাড়াও সূরা বাক্বারায় আরো ছয়টি প্রশ্নের উল্লেখ রয়েছে। বাকী ছয়টি প্রশ্ন পরবর্তী বিভিন্ন সূরায় বিদ্যমান।

উল্লেখিত আয়াতে বর্ণিত হয়েছে যে, সাহাবায়ে-কেরাম (রদ্বিয়াল্ল-হু ‘আনহুম আজমা‘য়ীন)  হযরত রসুলুল্ল-হ (সল্লাল্ল-হু ‘আলাইহি ওয়াসাল্লাম)-কে ‘আহিল্লা’ বা নতুন চাঁদ সম্পর্কে প্রশ্ন করেছিলেন। কারণ, চাঁদের আকৃতি-প্রকৃতি সূর্য থেকে ভিন্নতর। সেটা এক সময় সরু বাঁকা রেখার আকৃতি ধারন করে অতঃপর ক্রমান্বয়ে বৃদ্ধি পেতে থাকে, অবশেষে সম্পুর্ণ গোলকের মত হয়ে যায়। এরপর পূনরায় ক্রমান্বয়ে হ্রাসপ্রাপ্ত হতে থাকে। এই হ্রাস-বৃদ্ধির মূল কারণ অথবা অন্তর্নিহিত উদ্দেশ্য, লক্ষ ও সুবিধা-অসুবিধা সম্পর্কে তাঁরা প্রশ্ন করেছিলেন। এই দুই প্রকার প্রশ্নেরই সম্ভাবনা ছিল। কিন্তু যে উত্তর প্রদান করা হয়েছে, তাতে এর অন্তর্নিহীত উদ্দেশ্য লক্ষ্য ও সুবিধা-অসুবিধা সম্পর্কেই বর্ণিত হয়েছে। যদি প্রশ্নই এই হয়ে থাকে যে, চাঁদের হ্রাস-বৃদ্ধির লক্ষ ও উদ্দেশ্য কি? তবে তো প্রশ্ন অনুযায়ী উত্তর হয়েই গেছে। আর যদি প্রশ্নে এই হ্রাস-বৃদ্ধির অন্তর্নিহিত রহস্য জানবার উদ্দেশ্য থেকে থাকে, যা ছিল সাহাবায়ে কেরামের স্বভাববিরুদ্ধ, তবে চন্দ্রের হ্রাস-বৃদ্ধির  মৌল-তত্ত্ব বর্ণনার পরিবর্তে তাঁর উদ্দেশ্য ও লক্ষ বর্ণনার দ্বারা এ বিষয়ের প্রতি ইঙ্গিত করা হয়েছে যে, আকাশের গ্রহ-উপগ্রহ ও নক্ষত্রমণ্ডলীর মৌলিক উপাদান সম্পর্কে জ্ঞান লাভ করা মানুষের ক্ষমতার ঊর্দ্ধে। আর মানুষের ইহলৌকিক বা পারলৌকিক কোন বিষয়ই এই জ্ঞান লাভের উপর নির্ভর্শীল নয়। কাজেই চন্দ্রের হ্রাস-বৃদ্ধির মূল কারণ সম্পর্কে প্রশ্ন করা নিরর্থক। এ প্রসঙ্গে জিজ্ঞাস্য ও জবাব এই যে, চন্দ্রের এরূপ হ্রাস-বৃদ্ধি এবং ঊদয়াস্তের মধ্যে আমাদের কোন কোন মঙ্গল নিহিত? সেজন্য আল্লাহ্‌-

Share on facebook
Facebook
Share on twitter
Twitter
Share on linkedin
LinkedIn
সব বিভাগ