গম্বুজে খদ্বরা-রসূল স্বল্লাল্ল-হু ‘আলাইহি ওয়াসাল্লামের সবুজ গম্বুজ ‘উলামায়ে দেউবন্দের শিক্ষাগত যোগ্যতা ও ইশকে রসূলে জীবন্ত প্রমাণ!

(মাওলানা জুলফিক্বার আহমাদ সাহেব নকশবন্দীর একটি বক্তব্যের হুবুহু অনুবাদ)

দারুল উলূম দেউবন্দ এ গ্রাজুয়েশন করেছেন এরকম একজন ছাত্র, যিনি হুছাইন ‘আহমাদ মাদানী (র’হঃ) প্রিয় ছাত্র ছিলেন, তিনি দ্বীর্ঘ ২৭ বছর বুখারী ও মুসলিম শরীফের শিক্ষা দান করেছেন,  এই অদমের (মাওলানা জুলফিক্বার আহমাদ নকশবন্দী)-সাথে তার খূব ভাল সম্পর্ক ছিল, তিনি বললেন যে, হযরত আপনাকে একটি ঘটনা শুনাব? দারুল ‘উলূম দেওবন্দের? আমি বললাম হ্যাঁ শুনাও।

তিনি বললেন যখক সৌদি-’আরবে এমন একটি আন্দোল শুরু হয়েছিল যে, এখানে যত ধরণের বিদ’আতি কার্জ-কলাপ আছে সেগুলো সব বন্ধ করে দিতে হবে, তখন তারা তাদের সিদ্ধান্ত অনুযায়ী তাদের দেশের পূরাণো যেসব কবর (উঁচু উঁচু) ছিল যা তাদের পূর্বপুরুষরা বানিয়েছিল, সে সব কবরগুলোকে মাটির সাথে মিশিয়ে সমান করে দিয়েছে, অতপর তারা আলোচনায় আনলো যে, সবুজ গম্বুজ (গুম্বুজে খদ্বরা যা রসূল (স্বঃ)-এর রউদ্বায়ে আক্বদাসের উপরে আছে), এটাকে কি করব?  তখন সে সময়ের মদীনার বিচারপতি (যে যত বড় হয়, আল্লাহ পাক তাকে জ্ঞানও সে পরিমাণে দিয়ে থাকেন) বললেন যে, এটা একটা সেনসেটিভ তথা স্পর্শকাতর বিষয়, অতএব আপনারা বিভিন্ন দেশের বড় বড় উলামাদের সাথে বিভিন্ন মাধ্যমে এ ব্যাপারে আলোচনা করেন।

তার পরামর্শ অনুযায়ী তখনকার বিভিন্ন দেশের বড় বড় আলেমদের সাথে যোগাযোগ করলেন, সে উদ্দেশ্যে তাদের একটি দল দারুল ‘উলূম দেউবন্দেও আসলেন, এবং তাদের দলনেতা বললেন যে, রসূল (স্বঃ)-এর ‘হাদীস আছে যে, বিনা ‘আলাল ক্বুবূর তথা ক্ববরের উপর ঘর বানানোর অনুমিত নাই, ইসলামি শরী’আতে বলা আছে যে, খোলা আকাশের নিচেই ক্ববর দিতে হবে। যদি এই ‘হাদীসটি ’হাদীসে মুত্তাছ্বিল তথা ছ’হীহ সনদের মুত্তাছ্বিলের সাথে হয় এবং এই ‘হাদীসের রাবীও যদি বিশ্বাসযোগ্য হয়ে থাকে, তাহলে তো আমাদেরকে গন্বুজে খদ্বরা তথা সবুজ গম্বুজও ভেঙ্গে ফেলতে হবে, যেহেতু এটা ছ্ব’হীহ ‘হাদীস, সেহেতু ছ্ব’হীহ ’হাদীসের উপর আমল করা প্রতিটি মু’মিনের কর্তব্য, আমরা ‘হাদীসের উপর ‘আমল করবো। তাই আমরা এ ব্যাপারে আপনাদের সাথে আলোচনা করতে এসেছি। দেওবন্দের প্রিন্সিপাল সাহেব তাদেরকে বললেন যে, আপনারা এসেছেন, আপনারা তিন দিন পর্যন্ত আমাদের মেহমান, আপনারা আরাম করেন আমরা আপনাদের সাথে আলোচনা করবো ইনশা-আল্ল-হ।

(মুহতামিম) তিনি তখনকার সুদক্ষ আলেমদেরকে আহবান জানালেন এ বিষয়ে আলোচনায় অংশ গ্রহণ করতে। নির্দিষ্ট তারিখের একদিন আগেই প্রায় পাঁচশত আলেম-উলামা দেওবন্দ মাদরাসায় উপস্থিত হলেন। আলোচনার শুরুতেই সৌদি থেকে আগত দলের পক্ষ থেকে তাদের দলনেতা আলোচনার বিষয়-বস্তু {রসূল (স্বঃ)-এর ‘হাদীস আছে যে, বিনা ‘আলাল ক্বুবূর তথা ক্ববরের উপর ঘর বানানোর অনুমিত নাই, ইসলামি শরী’আতে বলা আছে যে, খোলা আকাশের নিচে ক্ববর দিতে হবে} উপস্থাপন করলেন। যদি এই ‘হাদীসের উপর কোন দ্বিমত থেকে থাকে তাহলে বলতে পারেন। তারঁ বক্তব্যের শেষে পুরা মজমাতে এমন একটা পবিবেশ তৈরি হল যে, সবাই চুপচাপ হয়ে গেল, কোন সাড়া শব্দ নেই, কার সাহস হতে পারে এরকম স্পর্শকাতর বিষয়ে কথাবার্তা বলার; কোথাও কোথাও একটু-আদটু কান্নার শব্দ শুনা যাচ্ছিলো। চিন্তা করছিতেছিল হে আল্লাহর রসূল! এ তোমার সবুজ মিম্বারের বিষয়; তারা এমন একটি গুরুত্বপূর্ণ বিষয়ের উপর এমন একটি ’হাদীস উপস্থাপন করেছেন, আমরা তাদেরকে কি জবাব দেব;

কিছুক্ষন নিরবতার পর হযরত আশরফ ‘আলী থানবী (র’হঃ) দাড়িয়ে বললেনঃ আল্ল’হামদু লিল্লাহ, এ বিষয়ে আল্লাহ পাক আমার অন্তর খুলে দিয়েছে। যখন এ কথা বললেন তারা অবাক হয়ে গেলেন এবং থানবী (র’হঃ)-এর প্রতি মনোযোগ দিলেন। থানবী (র’হঃ) বলতে শুরু করলেনঃ আমার যাচাই-বাচাই অনুযায়ী উল্লেখিত ‘হাদীসের মতনও ছ্ব’হীহ, সনদও ছ্ব’হীহ এবং সনদে মুত্তাছ্বিলও বটে, আমরা এ কথাকে মেনেও নিচ্ছি। তারা বললেনঃ আপনি কি বলছেন, একদিকে বলছেন যে, এই ‘হাদীস ছ্ব’হীহ (ক্ববরের উপর ঘর বানানোর অনুমতি নাই), অন্য দিকে বলছেন যে, এটাকে সরানো যাবে না।

তখন থানবী (র’হঃ) বললেন যে, এটাই তো আল্লাহ আমাকে অন্তরে ঢেলে দিয়েছেন, তারা বললেন আমাদেরকে বিষয়টা বুঝিয়ে বলুন, আমাদের বুঝে আসছে না। থানবী (র’হঃ) বললেন যে, দেখেন ক্ববরের উপর ঘর বানানোর ব্যাপারে ‘হদীসে নিষেদাজ্ঞা আছে, আমরা এ কথার উপর একমত যে, ক্ববরের উপর ঘর বানানোর অনুমতি নাই, কিন্তু আমার আম্মাজান ‘আয়িশা ছিদ্দীক্বার (রদ্বিঃ)-ঘরের বিষয়টা সম্পূর্ণ ভিন্ন, সেখানে আম্মাজান ‘আয়িশা ছিদ্দীক্বা (রদ্বিঃ)-এর ঘরটির অস্থিত্ব আগে থেকেই ছিল, ক্ববর পরবর্তিতে বানানো হয়েছে, অতএব, এটা বিনা আলাল ক্বুবুরে তথা ক্ববরে ঘর বানানোর সাথে শামিল নয়, কেউ এটাকে সরাতে বা ভাঙ্গতে পারবে না।

যার ফলে এখনো পর্যন্ত উলামায়ে দেউবন্দের শিক্ষাগত যোগ্যতা ও ইশকে রসূলে প্রমাণ হিসেবে এখনো পর্যন্ত প্রিয় নবিজির সবুজ গম্বুজটি দাড়িয়ে আছে। সুব’হানাল্লাহ; এ ধরণের ইলম তথা মা’রিফাত শুধুমাত্র আল্লাহ ভিতির মাধ্যমে মানুষ পেতে পারে।

অনুবাদ করণে মুহাম্মাদ রেজাউল করীম বুখারী

Share on facebook
Facebook
Share on twitter
Twitter
Share on linkedin
LinkedIn
সব বিভাগ