পৃষ্ঠা নং-২৮৫
আয়াতটি তো কোন কিছুই ছাড়েনি। সামান্য মন্দ কাজ হলেও তার সাজা দেয়া হবে। রসূলুল্লাহ্ (সল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) বললেনঃ চিন্তা করো না, সাধ্যমত কাজ করে যাও। কেননা, (উল্লেখিত শাস্তি যে জাহান্নামেই হবে, তা জরুরী নয়) তোমরা দুনিয়াতে যে কোন কষ্ট অথবা বিপদাপদে পড়, তাতে তোমাদের গোনাহ্র কাফফারা এবং মন্দ কাজের শাস্তি হয়ে থাকে। এমন কি যদি কারও পায়ে কাঁটা ফুটে, তাও গোনাহ্র কাফ্ফারা বৈ নয়।
অন্য এক রেওয়ায়েতে আছে, মুসলমান দুনিয়াতে যে কোন দুঃখ-কষ্ট, অসুখ-বিসুখ অথবা ভাবনা-চিন্তার সম্মুখীন হয়, তা তার গোনাহ্র কাফ্ফারা হয়ে যায়।
তিরমিযী ও তাফসীরে ইবনে-জারীর হযরত আবুবকর (রদ্বিয়াল্লাহু ‘আনহু) থেকে বর্ণনা করেন যে, রসূলুল্লাহ্ (সল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) যখন তাঁদেরকে مَن يَعْمَلْ سُوءًا يُجْزَ بِهِ আয়াতটি শুনালেন, তখন তাঁদের যেন কোমর ভেঙ্গে গেল। এ প্রতিক্রিয়া দেখে তিনি বললেনঃ ব্যাপার কি? হযরত সিদ্দীক (রদ্বিয়াল্লাহু ‘আনহু) আরয করলেনঃ ইয়া রসূলুল্লাহ্! আমাদের মধ্যে এমন কে আছে, যে কোন মন্দ কাজ করেনি? প্রত্যেক কাজেরই যদি প্রতিফল ভোগ করতে হয়, তবে কে রক্ষা পাবে? রসূলুল্লাহ্ (সল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) বললেনঃ হে আবুবকর! আপনারা মোটেই চিন্তিত হবেন না। কেননা, দুনিয়ার দুঃখ-কষ্টের মাধ্যমে আপনাদের গোনাহ্র কাফ্ফারা হয়ে যাবে।
এক রেওয়ায়েতে আছে, তিনি বললেনঃ আপনি কি অসুস্থ হন না? আপনি কি কোন দুঃখ ও বিপদে পতিত হন না? হযরত আবু বকর সিদ্দীক (রদ্বিয়াল্লাহু ‘আনহু) আরয করলেনঃ নিশ্চয় এসব বিষয়ের সম্মুখীন হই। তখন রসূলুল্লাহ্ (সল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) বললেনঃ ব্যাস, এটাই আপনাদের প্রতিফল।
আবু দাউদ প্রমুখের বর্ণিত হযরত আয়েশা সিদ্দীকা (রদ্বিয়াল্লাহু ‘আনহা)-এর হাদীসে বলা হয়েছে, বান্দা জ্বরে কষ্ট পেলে কিংবা পায়ে কাঁটা বিদ্ধ হলে তা তাঁর গোনাহ্র কাফ্ফারা হয়ে যায়। এমনকি যদি কোন ব্যক্তি কোন বস্তু এক পকেটে তালাশ করে অন্য পকেটে পায়, তবে এতটুকু কষ্টও তার গোনাহ্র কাফ্ফারা হয়ে যায়।
মোটকথা, আলোচ্য আয়াতে মুসলমানদেরকে নির্দেশ দিয়েছে যে, শুধু দাবী ও বাসনায় লিপ্ত হয়ো না; বরং কাজের চিন্তা কর। কেননা, তোমরা অমুক নবী কিংবা গ্রন্থের অনুসারী-শুধু এ বিষয় দ্বারাই তোমরা সাফল্য অর্জন করতে পারবে না। বরং এ গ্রন্থের প্রতি বিশুদ্ধ ঈমান এবং তদনুযায়ী সৎকার্য সম্পাদনের মধ্যেই প্রকৃত সাফল্য নিহিত রয়েছে।
وَإِنِ ٱمۡرَأَةٌ خَافَتۡ مِنۢ بَعۡلِهَا نُشُوزًا أَوۡ إِعۡرَاضٗا فَلَا جُنَاحَ عَلَيۡهِمَآ أَن يُصۡلِحَا بَيۡنَهُمَا صُلۡحٗاۚ وَٱلصُّلۡحُ خَيۡرٞۗ وَأُحۡضِرَتِ ٱلۡأَنفُسُ ٱلشُّحَّۚ وَإِن تُحۡسِنُواْ وَتَتَّقُواْ فَإِنَّ ٱللَّهَ كَانَ بِمَا تَعۡمَلُونَ خَبِيرٗا ١٢٨
১২৮.যদি কোন নারী স্বীয় স্বামীর পক্ষ থেকে অসদাচরণ কিংবা উপেক্ষার আশংকা করে, তবে পরস্পর কোন মীমাংসা করে নিলে তাদের উভয়ের কোন গোনাহ নাই। মীমাংসা উত্তম। মনের সামনে লোভ বিদ্যমান আছে। যদি তোমরা উত্তম কাজ কর এবং খোদাভীরু হও, তবে, আল্লাহ তোমাদের সব কাজের খবর রাখেন।
وَلَن تَسۡتَطِيعُوٓاْ أَن تَعۡدِلُواْ بَيۡنَ ٱلنِّسَآءِ وَلَوۡ حَرَصۡتُمۡۖ فَلَا تَمِيلُواْ كُلَّ ٱلۡمَيۡلِ فَتَذَرُوهَا كَٱلۡمُعَلَّقَةِۚ وَإِن تُصۡلِحُواْ وَتَتَّقُواْ فَإِنَّ ٱللَّهَ كَانَ غَفُورٗا رَّحِيمٗا ١٢٩
১২৯.তোমরা কখনও নারীদেরকে সমান রাখতে পারবে না, যদিও এর আকাঙ্ক্ষী হও। অতএব, সম্পূর্ণ ঝুঁকেও পড়ো না যে, একজনকে ফেলে রাখ দোদুল্যমান অবস্থায়। যদি সংশোধন কর এবং খোদাভীরু হও, তবে আল্লাহ ক্ষমাশীল, করুণাময়।
وَإِن يَتَفَرَّقَا يُغۡنِ ٱللَّهُ كُلّٗا مِّن سَعَتِهِۦۚ وَكَانَ ٱللَّهُ وَٰسِعًا حَكِيمٗا ١٣٠
১৩০.যদি উভয়েই বিচ্ছিন্ন হয়ে যায়, তবে আল্লাহ স্বীয় প্রশস্ততা দ্বারা প্রত্যেককে অমুখাপেক্ষী করে দিবেন। আল্লাহ সুপ্রশস্ত, প্রজ্ঞাময়।
وَلِلَّهِ مَا فِي ٱلسَّمَٰوَٰتِ وَمَا فِي ٱلۡأَرۡضِۗ وَلَقَدۡ وَصَّيۡنَا ٱلَّذِينَ أُوتُواْ ٱلۡكِتَٰبَ مِن قَبۡلِكُمۡ وَإِيَّاكُمۡ أَنِ ٱتَّقُواْ ٱللَّهَۚ وَإِن تَكۡفُرُواْ فَإِنَّ لِلَّهِ مَا فِي ٱلسَّمَٰوَٰتِ وَمَا فِي ٱلۡأَرۡضِۚ وَكَانَ ٱللَّهُ غَنِيًّا حَمِيدٗا ١٣١
১৩১.আর যা কিছু রয়েছে আসমান সমূহে ও যমীনে সবই আল্লাহর। বস্তুতঃ আমি নির্দেশ দিয়েছি তোমাদের পূর্ববর্তী গ্রন্থের অধিকারীদেরকে এবং তোমাদেরকে যে, তোমরা সবাই ভয় করতে থাক আল্লাহকে। যদি তোমরা তা না মান, তবে জেনো, সে সব কিছুই আল্লাহ তা’আলার যা কিছু রয়েছে আসমান সমূহে ও যমীনে। আর আল্লাহ হচ্ছেন অভাবহীন, প্রসংশিত।
وَلِلَّهِ مَا فِي ٱلسَّمَٰوَٰتِ وَمَا فِي ٱلۡأَرۡضِۚ وَكَفَىٰ بِٱللَّهِ وَكِيلًا ١٣٢
১৩২.আর আল্লাহরই জন্যে সে সবকিছু যা কিছু রয়েছে আসমান সমূহে ও যমীনে। আল্লাহই যথেষ্ট কর্মবিধায়ক।
إِن يَشَأۡ يُذۡهِبۡكُمۡ أَيُّهَا ٱلنَّاسُ وَيَأۡتِ بَِٔاخَرِينَۚ وَكَانَ ٱللَّهُ عَلَىٰ ذَٰلِكَ قَدِيرٗا ١٣٣
১৩৩.হে মানবকূল, যদি আল্লাহ তোমাদেরকে সরিয়ে তোমাদের জায়গায় অন্য কাউকে প্রতিষ্ঠিত করেন? বস্তুতঃ আল্লাহর সে ক্ষমতা রয়েছে।
مَّن كَانَ يُرِيدُ ثَوَابَ ٱلدُّنۡيَا فَعِندَ ٱللَّهِ ثَوَابُ ٱلدُّنۡيَا وَٱلۡأٓخِرَةِۚ وَكَانَ ٱللَّهُ سَمِيعَۢا بَصِيرٗا ١٣٤
১৩৪.যে কেউ দুনিয়ার কল্যাণ কামনা করবে, তার জেনে রাখা প্রয়োজন যে, দুনিয়া ও আখেরাতের কল্যাণ আল্লাহরই নিকট রয়েছে। আর আল্লাহ সব কিছু শোনেন ও দেখেন।
আনুষঙ্গিক জ্ঞাতব্য বিষয়:
দাম্পত্য জীবন সম্পর্কে কতিপয় পথনির্দেশঃ
وَإِنِ ٱمۡرَأَةٌ خَافَتۡ مِنۢ بَعۡلِهَا نُشُوزًا أَوۡ إِعۡرَاضٗا فَلَا جُنَاحَ عَلَيۡهِمَآ أَن يُصۡلِحَا بَيۡنَهُمَا صُلۡحٗاۚ وَٱلصُّلۡحُ خَيۡرٞۗ وَأُحۡضِرَتِ ٱلۡأَنفُسُ ٱلشُّحَّۚ وَإِن تُحۡسِنُواْ وَتَتَّقُواْ فَإِنَّ ٱللَّهَ كَانَ بِمَا تَعۡمَلُونَ خَبِيرٗا ١٢٨ وَلَن تَسۡتَطِيعُوٓاْ أَن تَعۡدِلُواْ بَيۡنَ ٱلنِّسَآءِ وَلَوۡ حَرَصۡتُمۡۖ فَلَا تَمِيلُواْ كُلَّ ٱلۡمَيۡلِ فَتَذَرُوهَا كَٱلۡمُعَلَّقَةِۚ وَإِن تُصۡلِحُواْ وَتَتَّقُواْ فَإِنَّ ٱللَّهَ كَانَ غَفُورٗا رَّحِيمٗا ١٢٩ وَإِن يَتَفَرَّقَا يُغۡنِ ٱللَّهُ كُلّٗا مِّن سَعَتِهِۦۚ وَكَانَ ٱللَّهُ وَٰسِعًا حَكِيمٗا ١٣٠
অত্র তিনটি আয়াতে আল্লাহ্ তাআলা মানুষের দাম্পত্য জীবনের এমন একটি জটিল দিক সম্পর্কে পথ নির্দেশ করেছেন, সুদীর্ঘ দাম্পত্য জীবনের বিভিন্ন সময়ে প্রত্যেকটি দম্পতিকেই যার সম্মুখীন হতে হয়। তা হলো স্বামী-স্ত্রীর পারস্পরিক মনোমালিন্য ও মন কষাকষি। আর এটি এমন এক জটিল সমস্যা, যার সুষ্ঠ সমাধান যথাসময়ে না হলে শুধু স্বামী-স্ত্রীর জীবনই দুর্বিসহ হয় না, বরং অনেক ক্ষেত্রে এহেন পারিবারিক মনোমালিন্যই গোত্র ও বংশগত কলহ-বিবাদ তথা হানাহানি পর্যন্ত পৌঁছে দেয়। কুরআন পাক নর ও নারীর যাবতীয় অনুভূতি ও প্রেরণার প্রতি লক্ষ্য রেখে উভয় শ্রেণীকে এমন এক সার্থক জীবন ব্যবস্থা বাতলে দেয়ার জন্য অবতীর্ণ হয়েছে, যার ফলে মানুষের পারিবারিক-