আন নিসা, আয়াত ৫৫-৭৫

পৃষ্ঠা নং-২৬১

তাদেরকে বলা হয় যে, তোমরা সে নির্দেশের প্রতি চলে এসো, যা আল্লাহ্ তাআলা অবতীর্ণ করেছেন এবং চলে এসো তাঁর রসূলের দিকে, তখন এসব মুনাফেক আপনার দিকে আসতে অনীহা প্রকাশ করে।

وَإِذَا قِيلَ لَهُمۡ تَعَالَوۡاْ إِلَىٰ مَآ أَنزَلَ ٱللَّهُ وَإِلَى ٱلرَّسُولِ رَأَيۡتَ ٱلۡمُنَٰفِقِينَ يَصُدُّونَ عَنكَ صُدُودٗا ٦١

৬১.আর যখন আপনি তাদেরকে বলবেন, আল্লাহর নির্দেশের দিকে এসো-যা তিনি রসূলের প্রতি নাযিল করেছেন, তখন আপনি মুনাফেকদিগকে দেখবেন, ওরা আপনার কাছ থেকে সম্পূর্ণ ভাবে সরে যাচ্ছে।

فَكَيۡفَ إِذَآ أَصَٰبَتۡهُم مُّصِيبَةُۢ بِمَا قَدَّمَتۡ أَيۡدِيهِمۡ ثُمَّ جَآءُوكَ يَحۡلِفُونَ بِٱللَّهِ إِنۡ أَرَدۡنَآ إِلَّآ إِحۡسَٰنٗا وَتَوۡفِيقًا ٦٢

৬২.এমতাবস্থায় যদি তাদের কৃতকর্মের দরুন বিপদ আরোপিত হয়, তবে তাতে কি হল! অতঃপর তারা আপনার কাছে আল্লাহর নামে কসম খেয়ে খেয়ে ফিরে আসবে যে, মঙ্গল ও সম্প্রীতি ছাড়া আমাদের অন্য কোন উদ্দেশ্য ছিল না।

أُوْلَٰٓئِكَ ٱلَّذِينَ يَعۡلَمُ ٱللَّهُ مَا فِي قُلُوبِهِمۡ فَأَعۡرِضۡ عَنۡهُمۡ وَعِظۡهُمۡ وَقُل لَّهُمۡ فِيٓ أَنفُسِهِمۡ قَوۡلَۢا بَلِيغٗا ٦٣

৬৩.এরা হলো সে সমস্ত লোক, যাদের মনের গোপন বিষয় সম্পর্কেও আল্লাহ তা’আলা অবগত। অতএব, আপনি ওদেরকে উপেক্ষা করুন এবং ওদেরকে সদুপদেশ দিয়ে এমন কোন কথা বলুন যা তাদের জন্য কল্যাণকর।

وَمَآ أَرۡسَلۡنَا مِن رَّسُولٍ إِلَّا لِيُطَاعَ بِإِذۡنِ ٱللَّهِۚ  وَلَوۡ أَنَّهُمۡ إِذ ظَّلَمُوٓاْ أَنفُسَهُمۡ جَآءُوكَ فَٱسۡتَغۡفَرُواْ ٱللَّهَ وَٱسۡتَغۡفَرَ لَهُمُ ٱلرَّسُولُ لَوَجَدُواْ ٱللَّهَ تَوَّابٗا رَّحِيمٗا ٦٤

৬৪.বস্তুতঃ আমি একমাত্র এই উদ্দেশ্যেই রসূল প্রেরণ করেছি, যাতে আল্লাহর নির্দেশানুযায়ী তাঁদের আদেশ-নিষেধ মান্য করা হয়। আর সেসব লোক যখন নিজেদের অনিষ্ট সাধন করেছিল, তখন যদি আপনার কাছে আসত অতঃপর আল্লাহর নিকট ক্ষমা প্রার্থনা করত এবং রসূলও যদি তাদেরকে ক্ষমা করিয়ে দিতেন। অবশ্যই তারা আল্লাহকে ক্ষমাকারী, মেহেরবানরূপে পেত।

فَلَا وَرَبِّكَ لَا يُؤۡمِنُونَ حَتَّىٰ يُحَكِّمُوكَ فِيمَا شَجَرَ بَيۡنَهُمۡ ثُمَّ لَا يَجِدُواْ فِيٓ أَنفُسِهِمۡ حَرَجٗا مِّمَّا قَضَيۡتَ وَيُسَلِّمُواْ تَسۡلِيمٗا ٦٥

৬৫.অতএব, তোমার পালনকর্তার কসম, সে লোক ঈমানদার হবে না, যতক্ষণ না তাদের মধ্যে সৃষ্ট বিবাদের ব্যাপারে তোমাকে ন্যায়বিচারক বলে মনে না করে। অতঃপর তোমার মীমাংসার ব্যাপারে নিজের মনে কোন রকম সংকীর্ণতা পাবে না এবং তা হৃষ্টচিত্তে কবুল করে নেবে।

وَلَوۡ أَنَّا كَتَبۡنَا عَلَيۡهِمۡ أَنِ ٱقۡتُلُوٓاْ أَنفُسَكُمۡ أَوِ ٱخۡرُجُواْ مِن دِيَٰرِكُم مَّا فَعَلُوهُ إِلَّا قَلِيلٞ مِّنۡهُمۡۖ  وَلَوۡ أَنَّهُمۡ فَعَلُواْ مَا يُوعَظُونَ بِهِۦ لَكَانَ خَيۡرٗا لَّهُمۡ وَأَشَدَّ تَثۡبِيتٗا ٦٦

৬৬.আর যদি আমি তাদের নির্দেশ দিতাম যে, নিজেদের প্রাণ ধ্বংস করে দাও কিংবা নিজেদের নগরী ছেড়ে বেরিয়ে যাও, তবে তারা তা করত না; অবশ্য তাদের মধ্যে অল্প কয়েকজন। যদি তারা তাই করে যা তাদের উপদেশ দেয়া হয়, তবে তা অবশ্যই তাদের জন্য উত্তম এং তাদেরকে নিজের ধর্মের উপর সুদৃঢ় রাখার জন্য তা উত্তম হবে।

وَإِذٗا لَّأٓتَيۡنَٰهُم مِّن لَّدُنَّآ أَجۡرًا عَظِيمٗا ٦٧

৬৭.আর তখন অবশ্যই আমি তাদেরকে নিজের পক্ষ থেকে মহান সওয়াব দেব।

وَلَهَدَيۡنَٰهُمۡ صِرَٰطٗا مُّسۡتَقِيمٗا ٦٨

৬৮.আর তাদেরকে সরল পথে পরিচালিত করব।

 আনুষঙ্গিক জ্ঞাতব্য বিষয়

রসূলে কারীম (সল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম)-এর সিদ্ধান্ত গ্রহণ না করা কুফরঃ এ আয়াতে রসূল কারীম (সল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম)-এর মহত্ত্ব ও সুউচ্চ মর্যাদার বিষয় প্রকাশ করার সঙ্গে সঙ্গে কুরআনের অসংখ্য আয়াতের দ্বারা প্রমাণিত মহানবী (সল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম)-এর আনুগত্যের অপরিহার্যতার বিষয়টি সবিস্তারে বিশ্লেষণ করা হয়েছে। এ আয়াতে আল্লাহ্ তাআলা কসম খেয়ে বলেছেন যে, কোন মানুষ ততক্ষণ পর্যন্ত মুমিন কিংবা মুসলমান হতে পারে না যতক্ষণ না সে ধীরস্থির মস্তিষ্কে মহানবী (সল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম)-কে এভাবে স্বীকার করে নেবে যাতে তাঁর কোন সিদ্ধান্তেই মনে কোন রকম সংকীর্ণতা না থাকে।

মহানবী (সল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) রসূল হিসাবে গোটা উম্মতের শাসক এবং যে কোন বিবাদের মীমাংসার যিম্মাদার। তাঁর শাসন ও সিদ্ধান্ত অপর কাউকে বিচারক সাব্যস্ত করার উপর নির্ভরশীল নয়। তার পরেও এ আয়াতে মুসলমানগণকে বিচারক সাব্যস্ত করে নিতে বলা হয়েছে। তার কারণ, সরকারীভাবে সাব্যস্তকৃত বিচারক এবং তার মীমাংসার উপর অনেকেরই সন্তুষ্টি আসে না, যেমনটি আসে নিজের মনোনীত বা সাব্যস্তকৃত সালিস বা বিচারকের উপর। কিন্তু মহানবী (সল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) শুধুমাত্র একজন শাসকই নন, বরং তিনি একজন নিষ্পাপ রসূল, রহমাতুল লিল-আলামীন এবং উম্মতের জন্য একান্ত দয়ালু পিতাও বটে। কাজেই শিক্ষা দেয়া হয়েছে যে, যখনই কোন বিষয়ে, কোন সমস্যার ব্যাপারে মতবিরোধ দেখা দেয়, তখনই রসূলে মকবুল (সল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম)-কে বিচারক সাব্যস্ত করে তার মীমাংসা করিয়ে নেয়া এবং অতঃপর তাঁর মীমাংসাকে স্বীকার করে নিয়ে সেমতে কাজ করা উভয় পক্ষের উপর ফরয।

মতবিরোধের ক্ষেত্রে মহানবী (সল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম)-কে বিচারক সাব্যস্ত করাঃ কুরআনের তফসীরকারগণ বলেছেন যে, কুরআনের বাণীসমূহের উপর আমল করা মহানবী (সল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম)-এর যুগের সাথেই সীমিত নয়। তাঁর তিরোধানের পর তাঁর পবিত্র শরীয়তের মীমাংসাই হল তাঁর মীমাংসা। কাজেই নির্দেশটি কেয়ামত পর্যন্ত তেমনিভাবে বলবৎ থাকবে, যেমন ছিল তাঁর যুগে। তখন যেমন সরাসরি (কোন বিষয়ের সিদ্ধান্তকল্পে) তাঁর কাছে উপস্থিত করা হত, তেমনি তাঁর পরে তাঁর শরীয়তের মীমাংসা নিতে হবে। আর এটা প্রকৃতপক্ষে তাঁরই অনুসরণ।

কয়েকটি গুরুত্বপূর্ণ মাসায়েলঃ প্রথমতঃ সে ব্যক্তি আদৌ মুসলমান নয়, যে নিজের যাবতীয় বিবাদ ও মোকদ্দমায় রসূলে কারীম (সল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম)-এর মীমাংসায় সন্তুষ্ট হতে পারে না। সে কারণেই হযরত ফারূকে আযম (রদ্বিয়াল্লাহু ‘আনহু) সে লোকটিকে হত্যা করে ফেলেছিলেন, যে মহানবী (সল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম)-এর মীমাংসায় রাযী হয়নি এবং পুনরায় বিষয়টি ফারূকে আযমের দরবারে নিয়ে গিয়েছিল। এই নিহত ব্যক্তির ওয়ারিসবর্গ রসূলে কারীম (সল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম)-এর আদালতে হযরত ওমর ফারূকের বিরুদ্ধে মামলা দায়ের করে যে, তিনি একজন মুসলমানকে অকারণে হত্যা করেছেন। এই মামলা হুযূরের দরবারে উপস্থিত হওয়ার সাথে সাথে স্বতঃস্ফুর্তভাবে তাঁর মুখ দিয়ে বেরিয়ে আসে-

عَنْ أَبِي الأَسْوَدِ ، قَالَ : اخْتَصَمَ رَجُلانِ إِلَى رَسُولِ اللَّهِ صَلَّى اللَّهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ , فَقَضَى بَيْنَهُمَا ، فَقَالَ الَّذِي قُضِيَ عَلَيْهِ : رُدَّنَا إِلَى عُمَرَ بْنِ الْخَطَّابِ ، فَقَالَ رَسُولُ اللَّهِ : نَعَمْ , انْطَلِقَا إِلَيْهِ ، فَلَمَّا أَتَيَا عُمَرَ ، قَالَ الرَّجُلُ : يَابْنَ الْخَطَّابِ ، قَضَى لِي رَسُولُ اللَّهِ صَلَّى اللَّهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ , عَلَى هَذَا ، فَقَالَ : رُدَّنَا إِلَى عُمَرَ ، فَرَدَّنَا إِلَيْكَ ، قَالَ : كَذَلِكَ ؟ قَالَ : نَعَمْ ، قَالَ عُمَرُ : مَكَانَكُمَا حَتَّى أَخْرُجَ إِلَيْكُمَا فَأَقْضِيَ بَيْنَكُمَا ، فَخَرَجَ إِلَيْهِمَا مُشْتَمِلا عَلَى سَيْفِهِ , فَضَرَبَ الَّذِي قَالَ : رُدَّنَا إِلَى عُمَرَ ، فَقَتَلَهُ ، وَأَدْبَرَ الآخَرُ فَارًّا إِلَى رَسُولِ اللَّهِ ، فَقَالَ : يَا رَسُولَ اللَّهِ ، قَتَلَ ، وَاللَّهِ ، عُمَرُ صَاحِبِي ، وَلَوْ مَا أَنِّي أَعْجَزْتُهُ لَقَتَلَنِي ، فَقَالَ رَسُولُ اللَّهِ : مَا كُنْتُ أَظُنُّ أَنْ يَجْتَرِئَ عُمَرُ عَلَى قَتْلِ مُؤْمِنٍ

(অর্থাৎ, আমার ধারণা ছিল না যে, ওমর কোন মুমিনকে হত্যার সাহস করতে পারবে।) এতে প্রমাণিত হয় যে, উচ্চতর বিচারকের নিকট যদি কোন অধঃস্তন বিচারকের মীমাংসার ব্যাপারে আপীল করা হয়, তবে-

Share on facebook
Facebook
Share on twitter
Twitter
Share on linkedin
LinkedIn
সব বিভাগ