আন নিসা, আয়াত ৩৫-৫৪

পৃষ্ঠা নং-২৫৬

জায়গায় বাল্’আম বাউরার ব্যাপারেও এমন ধরনের ঘটনা বিবৃত করেছে।

ইরশাদ হয়েছেঃ

وَاتْلُ عَلَيْهِمْ نَبَأَ الَّذِي آتَيْنَاهُ آيَاتِنَا فَانسَلَخَ مِنْهَا فَأَتْبَعَهُ الشَّيْطَانُ فَكَانَ مِنَ الْغَاوِينَ

এতে প্রতীয়মান হচ্ছে যে, শুধু কিতাব সম্পর্কিত এলেম বা জ্ঞান থাকাটাই কল্যাণ ও মঙ্গলকর হতে পারে না, যে পর্যন্ত না যথার্থভাবে তার অনুসরণ করা হবে এবং যে পর্যন্ত না হীন পার্থিব লোভ-লালসা ও কামনা-বাসনাকে পরিপূর্ণরূপে বর্জন করতে পারবে। তা না হলে মানুষ তার ধর্ম হেন প্রিয় বস্তুকেও স্বীয় রৈপিক কামনা-বাসনার বলীতে পরিণত করা থেকে বাঁচাতে পারে না। ইদানীংকালেও কোন কোন লোক এমন রয়েছে, যারা জৈবিক ও রাজনৈতিক স্বার্থ ও উদ্দেশ্য সাধনের জন্য স্বীয় সত্য মতকে অতি সহজে বর্জন করে বসে এবং ধর্ম বিবর্জিত বিশ্বাস ও মতবাদকে ইসলামের ছদ্মাবরণে উপস্থিত করার যথাসাধ্য চেষ্টা করে। না তাদের মনে আল্লাহ্‌র সাথে প্রদত্ত প্রতিশ্রুতির কোন পরোয়া থাকে, আর না থাকে আখেরাতের কোন রকম ভয়-ভীতি। বস্তুতঃ এ সমস্ত কিছুই সত্য সঠিক মতবাদকে বর্জন করে শয়তানের ইঙ্গিতে চলার পরিণতি।

তাফসীরকারগণ লিখেছেন, বাল্‌আম-বাঊরা একজন বিশিষ্ট ইহুদী আলেম ও উচ্চস্তরের দরবেশ ছিল। কিন্তু যখন সে নিজের রৈপিক কামনা-বাসনা চরিতার্থ করার জন্য মূসা (আঃ)-এর বিরুদ্ধে অশুভ চক্রান্ত করতে আরম্ভ করল, তখন মূসা (আঃ)-এর কোনই ক্ষতি হলো না। কিন্তু সে নিজে গোমরাহ হয়ে চিরতরে প্রত্যাখ্যাত হল।

আল্লাহ্‌র অভিসম্পাত ইহ ও পরকালীন অপমানের কারণঃ লা’নত বা অভিসম্পাত অর্থ হলো আল্লাহ্‌র রহমত ও করুণা থেকে দূরে সরে পড়া-চরম অপমান-অপদস্থতা। যার উপর আল্লাহ্‌র লা’নত পতিত হয় সে কখনও আল্লাহ্‌র নৈকট্য লাভ করতে পারে না। তাদের সম্পর্কে অতি কঠিন ভর্ৎসনার কথা বলা হয়েছে। কোরআনে আছে-

مَلْعُونِينَ أَيْنَمَا ثُقِفُوا أُخِذُوا وَقُتِّلُوا تَقْتِيلًا

অর্থাৎ, “যাদের উপর আল্লাহ্‌র অভিসম্পাত হয়েছে, তারা যেখানেই পাওয়া যাবে সেখানেই নিহত অথবা ধৃত হবে।” এই তো গেল তাদের পার্থিব অপমান। আখেরাতে তাদের অপমান এর চেয়েও কঠিন হবে।

আল্লাহ্‌র লানতের অধিকারী কারাঃ وَمَن يَلْعَنِ اللَّهُ فَلَن تَجِدَ لَهُ نَصِيرًا আয়াতের দ্বারা বোঝা যায় যে, যার উপর আল্লাহ্‌র লা’নত বর্ষিত হয়, তার কোন সাহায্যকারী থাকে না। এখন চিন্তা করার বিষয় এই যে, আল্লাহ্‌র লা’নতের যোগ্য কারা?

এক হাদীসে আছে যে, রসূলে কারীম (সাঃ) সুদগ্রহীতা এবং সুদ দাতা, সুদ সংক্রান্ত দলীল সম্পাদনকারী এবং সুদের লেনদেনের সাক্ষী সবার প্রতিই অভিসম্পাত করেছেন। এদের সবাই পাপের ক্ষেত্রে সমান।– (মুসলিম)

অন্য এক হাদীসে মহানবী (সাঃ) এরশাদ করেছেন, “যে লোক লূত (আঃ)-এর সম্প্রদায়ের অনুরূপ অপকর্মে লিপ্ত হবে সে অভিশপ্ত হবে।” অতঃপর তিনি বলেছেন, আল্লাহ্ তাআলা চোরদের প্রতিও অভিসম্পাত করেন। যে ডিম কিংবা রশির মত সাধারণ বস্তুও চুরি থেকে বিরত থাকে না, তারও হস্তকর্তন করা হয়।–(মেশকাত)

আরেক হাদীসে বলা হয়েছে ‘সুদগ্রহীন ও দাতার উপর আল্লাহ্ তাআলার লা’নত এবং সে সমস্ত নারীর উপর যারা নিজের শরীর গোদায়, যে অন্যের শরীরও গুদিয়ে দেয়, তেমনিভাবে চিত্রকারের উপরও আল্লাহ্‌র লা’নত।

অপর এক হাদীসে মহানবী (সাঃ) এরশাদ করেছেন, “আল্লাহ্ তাআলা লা’নত করেন মদ্যপায়ীর প্রতি, মদ যে ব্যক্তি পান করায় তার প্রতি, তার বিক্রেতা ও ক্রেতার প্রতি, যে মদের জন্য নির্যাস বের করে তার প্রতি এবং যারা মদ বহন করে তাদের সবার প্রতি।– (মেশকাত)

এক হাদীসে রসূলুল্লাহ্ (সাঃ) এরশাদ করেছেন, – ছয় প্রকার লোক রয়েছে যাদের প্রতি আমি অভিসম্পাত করেছি এবং আল্লাহ্ তাআলাও লা’নত করেছেন। আর প্রত্যেক নবীই মুস্তাজাবুদ্দাওয়াত হয়ে থাকেন। সে ছয় প্রকার লোক নিম্নরূপঃ

(১) আল্লাহ্‌র কিতাবে যারা কাট্‌-ছাঁট করে,

(২) যারা বলপূর্বক ক্ষমতা লাভ করে এবং এমনসব লোককে সম্মানে ভূষিত করে, যাদেরকে আল্লাহ্ অপদস্থ করেছেন আর এমন সব লোককে অপমানিত করে যাদেরকে আল্লাহ্ সম্মান দান করেছেন

(৩) যারা আল্লাহ্ কর্তৃক নির্ধারিত তকদীর বা নিয়তিকে অবিশ্বাস করে।

(৪) যারা আল্লাহ্ কর্তৃক হারামকৃত বস্তুসামগ্রীকে হালাল মনে করে।

(৫) বিশেষতঃ আমার বংশধরগণের মধ্যে সে সমস্ত লোক যারা হারামকে হালাল করে নেয় এবং

(৬) যে লোক আমার সুন্নতকে বর্জন করে।– (বায়হাকী)

মাসআলাঃ নির্দিষ্ট কোন ব্যক্তি সম্পর্কে-যদি সে ফাসেকও হয়ে থাকে, যে পর্যন্ত একথা নিশ্চতভাবে জানা না যায় যে, তার মৃত্যু কুফরী অবস্থায় হয়েছে, সে পর্যন্ত তার উপর লা’নত করা জায়েয নয়। এই মূলনীতির ভিত্তিতেই আল্লামা শামী এযীদের উপর লানত করতে বারণ করেছেন। তবে কুফরী অবস্থায় কোন ব্যক্তির মৃত্যু সম্পর্কে নিশ্চিত জানা থাকলে তার উপর লা’নত করা জায়েয। যেমন, আবু জাহ্‌ল, আবু লাহাব প্রভৃতি।–(শামী, ২য় খণ্ড, ৮৩৬পৃঃ)

মাসআলাঃ কারও নাম না করে এভাবে লা’নত করা জায়েয যে, জালেমদের উপর কিংবা মিথ্যাবাদীদের উপর আল্লাহ্‌র লা’নত বর্ষিত হোক।

মাসআলাঃ লা’নতের আভিধানিক অর্থ আল্লাহ্‌র রহমত হতে দূর হয়ে যাওয়া। শরীয়তের পরিভাষায় এর অর্থ কাফেরদের ক্ষেত্রে ব্যবহৃত হলে, রহমত থেকে বঞ্চিত হওয়া। আর মুমিনদের ক্ষেত্রে হলে আল্লাহ্‌র নৈকট্য লাভকারী (সৎকর্মশীলদের) মর্যাদা থেকে নীচে পড়ে যাওয়া। সে জন্যই কোন মুসলমানের জন্য তার নেক আমল কমে যাওয়ার দোয়া করা জায়েয নয়।– (কাহতানী থেকে শামী কর্তৃক উদ্ধৃতঃ ২য় খণ্ড, ৮৩৬পৃঃ)

ইহুদীদের হিংসা ও তার কঠোর নিন্দাঃ আল্লাহ্ রাব্বুল আলামীন নবী করীম (সাঃ)-কে যে জ্ঞানৈশ্বর্য ও শান-শওকত দান করেছিলেন, তা দেখে ইহুদীরা হিংসার অনলে জ্বলে মরতো। আল্লাহ্ তাআলা আলোচ্য ৫৩ ও ৫৪তম আয়াতে ওদের সে হিংসা-বিদ্বেষের কঠোর নিন্দা করেছেন এবং তাদের বিদ্বেষকে একান্ত অযৌক্তিক বলে আখ্যায়িত করে তার দু’টি-

Share on facebook
Facebook
Share on twitter
Twitter
Share on linkedin
LinkedIn
সব বিভাগ