আন-নিসা, আয়াত ১-১০

পৃষ্ঠা নং-২৩০

বহু-বিবাহঃ বহু-বিবাহের প্রথাটি ইসলাম পূর্ব যুগেও দুনিয়ার প্রায়  সকল ধর্ম মতেই বৈধ বলে বিবেচিত হতো। আরব, ভারতীয় উপমহাদেশ, ইরান, মিশর, ব্যাবলিন প্রভৃতি সব দেশেই এই প্রথার প্রচলন ছিল। বহু বিবাহের প্রয়োজনীয়তার কথা বর্তমান যুগেও স্বীকৃত।

বর্তমানকালে ইউরোপের এক শ্রেণীর চিন্তাবিদ বহু বিবাহ রহিত করার জন্য তাদের অনুসারীদের উদ্বুদ্ধ করে আসছেন বটে, কিন্তু তাতে কোন সুফল হয়নি। বরং তাতে আরও সমস্যা বৃদ্ধি পেয়েছে এবং এর ফল রক্ষিতার রূপে প্রকাশ পেয়েছে। অবশেষে প্রাকৃতিক ও স্বাভাবিক ব্যবস্থারই বিজয় হয়েছে। তাই আজকে ইউরোপের দূরদর্শী চিন্তাশীল ব্যক্তিরা বহু বিবাহের পূনঃপ্রচলন করার জন্য চিন্তা ভাবনা করছে।

ইসলাম পূর্ব যুগে কোন প্রতিবন্ধকতা ছাড়াই বহু বিবাহপ্রথা প্রচলন ছিল। বিভিন্ন ধর্ম ও ইতিহাস থেকে এটা জানা যায় যে, এর প্রতি কোন বাধা নিষেধ ও ছিল না। ইহুদী, খৃষ্টান, হিন্দু এবং পারসিকদের মধ্যে বহু বিবাহ প্রচলিত ছিল। তবে তৎকালে সীমা সংখ্যাহীন বহু বিবাহের জন্য অনেকের লোভ লালসার অন্ত ছিল না। অন্য দিকে এ থেকে উদ্ভূত দায়িত্বের ব্যাপারেও তারা সঠিক ভূমিকা পালন করতে পারত না; বরং এসব স্ত্রীকে তারা রাখত দাসী-বাঁদীর মত এবং তাদের সাথে যথেচ্ছা ব্যবহার করত। তাদের প্রতি কোন প্রকার ইনসাফ করা হত না। চরম বৈষম্য বিরাজ করত পারস্পরিক সম্পর্কের ক্ষেত্রে।

অনেক সময় পছন্দসই কয়েকজনের দিকে লক্ষ রেখেই অবশিষ্টদের প্রতি চরম অবহেলা প্রদর্শন করা হত।

ইসলামের বিধানঃ কুরআন এই সামাজিক অনাচার এবং জুলুমের প্রতিরোধ করেছে। বহু-বিবাহের ব্যাপারে প্রয়োজনীয় বিধি-নিষেধও জারি করেছে। ইসলাম একই সময় চার এর অধিক স্ত্রী রাখাকে হারাম ঘোষণা করেছে। ইসলাম এ ক্ষেত্রে ইনসাফ কায়েমের জন্য বিশেষ তাকিদ দিয়েছে এবং ইনসাফের পরিবর্তে জুলুম করা হলে তার জন্য শান্তির কথা ঘোষণা করেছে।

উল্লেখ্য যে, আলোচ্য আয়াতে বলা হয়েছে, তোমাদের পছন্দমত দুই, তিন, অথবা চারজন স্ত্রীও গ্রহণ করতে পার।

আলোচ্য আয়াতেماطاب   (যা তোমাদের ভাল লাগে) শব্দটি ব্যবহার করা হয়েছে। হযরত হাসান বসরী, ইবনে জুবায়ের এবং ইবনে-মালেক (রহঃ) শব্দটির ব্যাখ্যা করেছেনما حل   শব্দ দ্বারা; যার অর্থ হচ্ছে যে সব মেয়ে তোমাদের জন্য বৈধ। আর অনেক তাফসীরকার উপরোক্ত শব্দটির শাব্দিক অর্থ ‘পছন্দ’ দ্বারাই এ আয়াতের ব্যাখ্যা করেছেন। তবে উভয় ব্যাখ্যার মধ্যে কোন বৈপরিত্য নেই। অর্থাৎ এর মর্মার্থ হচ্ছে এইযে, যেসব মেয়ে প্রকৃতিগতভাবে তোমাদের মনঃপুত এবং শরী‘আতের দৃষ্টিকোণ থেকে বৈধ হয় কেবল তাদেরকেই বিয়ে করতে পার।

আলোচ্য আয়াতে একাধীক অর্থাৎ চারজন স্ত্রী গ্রহন করার সুযোগ অবশ্য দেয়া হয়েছে, অন্যদিকে এই চার পর্যন্ত কথাটি আরোপ করে তার উর্ধ্ব সংখ্যক কোন স্ত্রী গ্রহন করতে পারবে না বরং তা হবে সম্পুর্ণ নিষিদ্ধ- তাও ব্যক্ত করে দেয়া হয়েছে।

যদি সমতা রক্ষা করা সম্ভব না হয়ঃ চারটি পর্যন্ত বিয়ের অনুমতি দেয়ার পর বলা হয়েছেঃ

– فَاِنْ خِفْتُمْ اَلَّا تَعْدِلُوْا فَوَاحِدَةً  অর্থাৎ, যদি আশংকা কর যে, স্ত্রীদের মধ্যে সমতা রক্ষা করতে পারবেনা, তবে এক স্ত্রীতেই তৃপ্ত থাক।

পবিত্র কুরআনে চার জন স্ত্রীর কথা বৈধ ঘোষনা করা হয়েছে যে, তোমরা তাদের মধ্যে সমতা বিধান তথা ন্যায় বিচার করতে না পার, তাহলে এক স্ত্রীর উপরই নির্ভর কর। এতে বোঝা যাচ্ছে যে, একাধিক বিয়ে ঠিক তখনই বৈধ হতে পারে, যখন শরিয়ত মোতাবেক সবার সাথে সমান আচরণ করা হবে; তাদের সবার অধিকার সমভাবে সংরক্ষন করা সম্ভব হবে। এ ব্যাপারে অপারক হলে এক স্ত্রীর উপরই নির্ভর করতে হবে। এটাই ইসলামের নির্দেশ।

রসুলে কারীম (সাঃ) একাধিক স্ত্রীর বেলায় সবার সাথে পরিপূর্ণ সমতার ব্যবহার করার ব্যাপারে বিশেষভাবে তাকিদ করেছেন এবং যারা এর খেলাফ করবে, তাদের জন্য কঠিন শাস্তির খবর দিয়েছেন। নিজের ব্যবহারীক জীবনেও তিনি সর্বোত্তম আদর্শ স্থাপন করে দেখিয়েছেন। এমনকি তিনি এমন বিষয়েও সমতাপূর্ণ ব্যবহারের আদর্শ স্থাপন করেছেন যে ক্ষেত্রে এর প্রয়োজন ছিলনা।

এক হাদীসে হুজুর (সাঃ) ইরশাদ করেছেন, যে ব্যক্তির দুই স্ত্রী রয়েছে, সে যদি এদের মধ্যে ব্যবহারের ক্ষেত্রে পূর্ণ সমতা ও ইনসাফ করতে না পারে, তবে কেয়ামতের ময়দানে সে এমন ভাবে উঠবে যে, তার শরীরের এক পার্শ্ব অবশ হয়ে থাকবে।  (মেশকাত ২৭৮ পৃঃ)

এ আয়াতে বলা হয়েছে যে, ভালবাসা ও অন্তরের আকর্ষন মানুষের সাধ্যায়ত্ব ব্যাপার নয়। তাই অসাধ্য বিষয়টিতেও সমতা রাখার উদ্দেশ্যে অতঃপর বলা হয়েছে; فَلَاتَمِيْلُوْا كُلَّ الْمَيْلِ অর্থাৎ, কোন এক স্ত্রীর প্রতি যদি তোমার আন্তরিক আকর্ষণ বেশী হয়ে যায়, তবে সেটা তোমার সাধ্যায়ত্ব ব্যপার নয় বটে, কিন্ত এ ক্ষেত্রেও অন্যজনের প্রতি পরিপূর্ণ উপেক্ষা প্রদর্শন করা জায়েয হবে না। আলোচ্য আয়াতে فَاِنْ خِفْتُمْ اَلَّا تَعْدِلُوْا فَوَاحِدَةً অর্থাৎ, যদি ইনসাফপূর্ণ ব্যবহার বজায় রাখতে পারবেনা বলে ভয় কর, তবে এক স্ত্রীতেই তৃপ্ত থাক, বলে সেই সমস্ত ব্যাপারেই ইনসাফপূর্ণ ব্যবহার করতে নির্দেশ দেয়া হয়েছে। যেগুলো মানুষের সাধ্যায়ত্ব। এসব ব্যাপারে বে-ইনসাফী মহাপাপ। আর যাদের এরূপ পাপে জড়িত হওয়ার আশঙ্কা রয়েছে, তাদের পক্ষে একাধিক বিয়ে না করাই কর্তব্য।

একটি সন্দেহ ও তার জবাবঃ সূরা নিসার এ আয়াতে ইনসাফপূর্ণ ব্যবহার করতে না পারার আশঙ্কার ক্ষেত্রে এক বিয়েতেই তৃপ্ত থাকার নির্দেশ এবং পরবর্তী আয়াতে ‘তোমরা কোন অবস্থাতেই একাধিক স্ত্রীর মধ্যে সমতা রক্ষা করতে পারবে না’ এ দু’আয়াতের মূল তাৎপর্য অনুধাবন করতে না পেরে অনেকেই এমন একটা ভুল সিদ্ধান্তে উপনীত হন যে, ইনসাফপূর্ণ ব্যবহার ক্ষুন্ন হওয়ার আশঙ্কার ক্ষেত্রে যেহেতু এক বিয়েরই নির্দেশ এবং স্বয়ং কুরআনই যখন বলে যে, তোমরা কোন অবস্থাতেই-

Share on facebook
Facebook
Share on twitter
Twitter
Share on linkedin
LinkedIn
সব বিভাগ