আন-নিসা, আয়াত ১-১০

পৃষ্ঠা নং-২৩২

আয়াতে “হৃষ্টচিত্তে” প্রদানের শর্ত আরোপ করার পেছনে গভীর তাৎপর্য নিহিত রয়েছে। কেননা, মোহর স্ত্রীর অধিকার এবং তার নিজস্ব সম্পদ। হৃষ্টচিত্তে যদি সে কাউকে না দেয় বা দাবী ত্যাগ না করে, তবে স্বামী বা অভিভাবকের পক্ষে সে সম্পদ কোন অবস্থাতেই হালাল হবে না। হুযুর (সাঃ) এ হাদীসে শরিয়তের মূলনীতিরূপে ইরশাদ করেছেন।

أَ لَا لَا تَظْلِمُوا إِنَّهُ لَا يَحِلُّ مَالُ امْرِئٍ إِلَّا بِطِيبِ نَفْسٍ مِنْهُ

অর্থাৎ, ‘সাবধান’! জুলুম করোনা। মনে রেখো, কারো পক্ষে অন্যের সম্পদ তার আন্তরিক তুষ্টি ব্যতীত গ্রহন করা হালাল হবে না’ (মেশকাত পৃঃ২৫৫)

এ হাদীসটি এমন একটা গুরুত্বপূর্ণ মুলনীতির নির্দেশ দেয় যা সর্বপ্রকার প্রাপ্য ও লেন-দেনের ব্যাপারে হালাল এবং হারামের সীমরেখা নির্দেশ করে।

সম্পদের হেফাজত জরুরীঃ এ আয়াতে ধন-সম্পদের গুরুত্ব এবং মানুষের জীবন ধারণ ক্ষেত্রে এর প্রয়োজনীয়তার কথা উল্লেখ করা হয়েছে। এবং তদসঙ্গে সম্পদের হেফাজতের ক্ষেত্রে একটা সাধারণ ক্রুটির সংশোধন নির্দেশ করা হয়েছে। তা হচ্ছে, অনেকেই স্নেহান্ধ হয়ে অল্পবয়স্ক, অনভিজ্ঞ ছেলে-মেয়ে অথবা স্ত্রীলোকদের হাতে ধন-সম্পদের দায়-দায়িত্ব তুলে দেয়। যা অবশ্যম্ভাবী পরিণতি সম্পদের অপচয় এবং যা দারিদ্র ঘনিয়ে আসার আকারে দেখা দেয়।

অর্বাচীন ও অনভিজ্ঞদের হাতে সম্পদ তুলে দেয়া নিষিদ্ধঃ মুফাসসিরে কুরআন হযরত আবদুল্লাহ্ ইবনে আব্বাস (রাঃ) বলেন যে, কুরআনে পাকের এ আয়াতে নির্দেশ করা হয়েছে যে, তোমরা তোমাদের ধন-সম্পদ অপ্রাপ্তবয়স্ক সন্তান-সন্ততি কিংবা অনভিজ্ঞ স্ত্রীলোকদের হাতে তুলে দিয়ে তাদের মুখাপেক্ষী হয়ে থেকো না, বরং আল্লাহ তাআলা যেহেতু তোমাকে অভিভাবক এবং দেখা-শোনার দায়িত্ব দিয়েছেন, সেহেতু তুমি সম্পদ তোমার হাতে রেখে তাদের খাওয়া-পরার দায়-দায়িত্ব পালন করতে থাক। যদি তারা অর্থ সম্পদের দায়িত্ব নিজ হাতে নিয়ে নেয়ার আবদার করে, তবে তাদেরকে ভালভাবে বুঝিয়ে দাও যে, এসব তোমাদের জন্যই সংরক্ষন করা হচ্ছে, যাতে তাদের মনোকষ্টের কারণ না হয়। আবার সম্পদ বিনষ্ট হওয়ার সম্ভাবনাও দেখা না দেয়।

হযরত আবদুল্লাহ ইবনে আব্বাসের এ ব্যাখ্যা মতে অপ্রাপ্ত বয়স্ক বালক-বালিকা এবং অনভিজ্ঞ যে কোন স্ত্রীলোকের হাতেই ধন-সম্পদ তুলে না দেয়ার নির্দেশ প্রমান হয় -যাদের হাতে পড়ে সম্পদ বিনষ্ট হওয়ার আশঙ্কা রয়েছে। এতে ইয়াতীম শিশু বা নিজের সন্তানের কোন পার্থক্য নেই। হযরত আবূ মূসা আশআরীও এ আয়াতের এরূপ তাফসীরই বর্ণনা করেছেন। ইমামে তাফসীর হাফেজ তাবারীও এ মতই গ্রহন করেছেন।

অবশ্য প্রসঙ্গ আলোচনার মধ্যে এ আয়াতের নির্দেশ ইয়াতীমের বেলাতেই প্রযোজ্য বলে মনে হয়। কিন্তু আয়াতে যে ব্যাপক অর্থবোধক শব্দ ব্যবহার করা হয়েছে এবং ‘তোমাদের সম্পদ’ বলে যে ইশারা করা হয়েছে, তাতেও ইয়াতীম এবং সাধারণ বালক-বালিকা নির্বিশেষে সবার বেলাতেই এ নির্দেশ প্রযোজ্য বলে মনে হয়। মোট কথা মালের হেফাজত অত্যন্ত জরুরী এবং অপচয় করা গোনাহের কাজ।

নিজের সম্পদের হেফাজত করতে গিয়েই যদি কেউ নিহত হয়, তবে সে শহীদের মর্যাদা পাবে। যেমন, জীবন রক্ষা করতে গিয়ে যদি কেউ নিহত হয়, তবে সেও শহীদের মর্যাদা পাবে বলে হাদীসে উল্লেখিত রয়েছে। হুযুর (সাঃ) ইরশাদ করেনঃ مَنْ قُتِلَ دُونَ مَالِهِ فَهُوَ شَهِيدٌ “নিজের মালের হেফাজত করতে গিয়ে যদি কেউ নিহত হয়, তবে সে শহীদ” অর্থাৎ সওয়াবের দিক দিয়ে শহীদের মর্যাদা পাবে।- (বুখারী ও মুসলিম)

Share on facebook
Facebook
Share on twitter
Twitter
Share on linkedin
LinkedIn
সব বিভাগ