আল-বাকারা ১৬-৩৬

পৃষ্ঠা নং-২৪

কিভাবে তাদের মোকাবেলা করব, তাই আমার চিন্তা। আমি কখনও তাদের একথা মেনে নিতে পারি না।
মোটকথা, কুরআনের এ দাবী ও চ্যালেঞ্জ সারা ‘আরববাসী যে পরাজয় বরণ করেই ক্ষান্ত হয়েছে তাই নয়, বরং একে অদ্বিতীয় ও অনন্য বলে প্রকাশ্যভাবে স্বীকারও করেছে। যদি কুরআন মানব রচিত কালাম হতো, তবে সমগ্র ‘আরববাসী তথা সমগ্র বিশ্ববাসী অনুরূপ কোন না কোন একটি ছোট সূরা রচনা করতে অপারগ হতো না এবং এ কিতাবের অনন্য বৈশিষ্ট্যের কথা স্বীকারও করতো না। কুরআন ও কুরআনের বাহক রসূলের বিরোদ্ধে জান-মাল, ধন-সম্পদ, মান-ইজ্জত সবকিছু ব্যয় করার জন্য তারা প্রস্তুত ছিল, কিন্তু কুরআনের চ্যালেঞ্জ গ্রহণ করে দু’টি শব্দও রচনা করতে কেউ সাহসী হয়নি।

এর কারণ এই যে, সমস্ত মানুষ তাদের মূর্খতাজনিত কার্যকলাপ ও ‘‘আমল সত্ত্বেও কিছুটা বিবেকসম্পন্ন ছিল মিথ্যার প্রতি তাদের একটা সহজাত ঘৃণাবোধ ছিল। কুরআন শুনে তারা যখন বুঝতে পারলো যে, এমন কালাম রচনা আমাদের পক্ষে আদৌ সম্ভব নয়, তখন তারা কেবল একগুয়েমীর মাধ্যমে কোন বাক্য রচনা করে তা জনসম্মুখে তুলে ধরা নিজেদের জন্য লজ্জার ব্যাপার বলে মনে করতো। তারা জানতো যে, আমরা যদি কোন বাক্য পেশ করিও, তবে সমগ্র ‘আরবের শুদ্ধভাষী লোকেরা তুলনামূলক পরীক্ষায় আমাদেরকে অকৃতকার্যই ঘোষণা করবে এবং এজন্য অনর্থক লজ্জিত হতে হবে। এজন্য সমগ্র জাতিই চুপ করে ছিল। আর যারা কিছুটা ন্যায়পথে চিন্তা করেছে, তারা খোলাখুলিভাবে স্বীকার করে নিতেও কুন্ঠিত হয়নি যে, এটা আল্লাহ্‌র কালাম।

এসব ঘটনার মধ্যে একটি হচ্ছে এই যে, ‘আরবের একজন সরদার আস’আদ ইব্‌ন যিরার রসূলের চাচা ‘আব্বাস (রদ্বিয়াল্ল-হু ‘আনহু)-এর নিকট স্বীকার করেছেন যে, তোমরা অনর্থক মু’হাম্মাদ (সল্লাল্ল-হু ‘আলাইহি ওয়াসাল্লাম)-এর বিরুদ্ধাচরণ করে নিজেদের ক্ষতি করছ এবং পারস্পরিক সম্পর্কচ্ছেদ করছ। আমি দৃঢ় বিশ্বাসের সাথে বলতে পারি যে, নিশ্চয়ই তিনি আল্লাহ্‌র রসূল এবং তিনি যে কালাম পেশ করেছেন তা আল্লাহ্‌র কালাম এতে বিন্দুমাত্রও সন্দেহ নেই।

তৃতীয় কারণঃ তৃতীয় কারণ হচ্ছে এই যে, কুরআন কিছু গায়েবী সংবাদ এবং ভবিষ্যতে ঘটবে এমন অনেক ঘটনার সংবাদ দিয়েছে, যা হুবহু সংঘটিত হয়েছে। যথা-কুরআন ঘোষণা করেছে, রোম ও পারস্যের যুদ্ধে প্রথমতঃ পারস্যবাসী জয়লাভ করবে এবং দশ বছর যেতে না যেতেই পূণরায় রোম পারস্যকে পরাজিত করবে। এ আয়াত নাযিল হওয়ার পর মক্কার সরদারগণ হযরত আবূ বাক্‌র সিদ্দীক্ব (রদ্বিয়াল্ল-হু ‘আনহু)-এর সাথে এ ভবিষ্যদ্বাণীর যথার্থতা সম্পর্কে বাজী ধরল। শেষ পর্যন্ত কুরআনের ভবিষ্যদ্বাণী অনুযায়ী জয়লাভ করলো এবং বাজীর শর্তানুযায়ী যে মাল দেয়ার কথা ছিল, তা তাদের দিতে হলো। রসূলুল্ল-হ্ (সল্লাল্ল-হু ‘আলাইহি ওয়াসাল্লাম) অবশ্য এ মালগ্রহণ করেননি। কেননা, এরূপ বাজী ধরা শরী’আত অনুমোদন করে না। এমন আরো অনেক ঘটনা কুরআনে উল্লেখিত রয়েছে, যা গায়েবের সাথে সম্পর্কযুক্ত এবং নিকট অতীতে হুবুহু ঘটেছেও।

চতুর্থ কারণঃ চতুর্থ কারণ এই যে, কুরআন কারীমে পূর্ববর্তী উম্মত, শরী’আত ও তাদের ইতিহাস এমন পরিস্কারভাবে উল্লেখ করা হয়েছে যে, সে যুগের ইহুদী-খৃষ্টানদের পন্ডিতগণ, যাদেরকে পূর্ববর্তী আসমানী কিতাবসমূহের বিজ্ঞ লোক মনে করা হতো, তারাও এতটা অবগত ছিল না। রসূলুল্ল-হ্ (সল্লাল্ল-হু ‘আলাইহি ওয়াসাল্লাম)-এর নিকটা শিক্ষা ছিল না। কোন শিক্ষিত লোকের সাহায্যও গ্রহণ করেননি। কোন কিতাব কোনদিন স্পর্শও করেননি। এতদসত্ত্বেও দুনিয়ার প্রথম থেকে তাঁর যুগ পর্যন্ত সমগ্র বিশ্ববাসীর ঐতিহাসিক অবস্থা এবং তাদের শরী’আত সম্পর্কে অতি নিখুঁতভাবে বিস্তারিত আলোচনা করা আল্লাহ্র কালাম ব্যতীত কিছুতেই তাঁর পক্ষে সম্ভব হতে পারে না। প্রকৃতপক্ষে আল্লাহ্ তা‘আলাই যে তাঁকে এ সংবাদ দিয়েছেন এতে সন্দেহের অবকাশ নেই।

পঞ্চম কারণঃ পঞ্চম কারণ হচ্ছে এই যে, কুরআনের বিভিন্ন আয়াতে মানুষের অন্তর্নিহিত বিষয়াদি সম্পর্কিত যেসব সংবাদ দেয়া হয়েছে পরে সংশ্লিষ্ট লোকদের স্বীকারোক্তিতে প্রমাণিত হয়েছে যে, এ সব কথাই সত্য। এ কাজও আল্লাহ্ তা‘আলারই কাজ, তা কোন মানুষের পক্ষে সম্ভব ছিল না।

ষষ্ঠ কারণঃ ষষ্ঠ কারণ হচ্ছে যে, কুরআনে এমন সব আয়াত রয়েছে যাতে কোন সম্প্রদায় বা কো ব্যক্তি সম্পর্কে ভবিষ্যদ্বাণী করা হয়েছে যে, তাদের দ্বারা অমুক কাজ হবে না; তারা তা করতে পারবে না। ইহুদীদের সম্পর্কে বলা হয়েছে, যদি তারা নিজেরদেরক আল্লাহ্র প্রিয় বান্দা বলেই মনে করে, তবে তারা নিশ্চয়ই তাঁর নিকট যেতে পছন্দ করবে। সুতরাং এমতাবস্থায় তাদের পক্ষে মৃত্যুকামনা করা অপছন্দনীয় হতে পারে না। এ প্রসেঙ্গ ইরশাদ হচ্ছেঃ

وَلَن يَتَمَنَّوۡهُ أَبَدَۢا তারা কখনও তা চাইবে না।

মৃত্যু কামনা করা তাদের পক্ষে কঠিন ছিল না। বিশেষ করে ঐ সমস্ত লোকদের জন্য যারা কুরআনকে মিথ্যা বলে অভিহিত করতো। কুরআনের ইরশাদ মোতাবেক তাদের মৃত্যু কামনা করার ব্যাপারে ভয় পাওয়ার কোন কারণ ছিল না। ইহুদীদের পক্ষে মৃত্যু কামনার (মোবাহালা) এ চ্যালেঞ্জ গ্রহণ করে মুসলামানদেরকে পরাজিত করার অত্যন্ত সুবর্ণ সুযোগ ছিল। কুরআনের দাবীর পরিপ্রেক্ষিতে সঙ্গে সঙ্গেই তাতে সম্মত হওয়া তাদের পক্ষে উচিত ছিল। ন্তিু ইহুদী ও মুশরিকরা মুখে কুরআনকে যতই মিথ্যা বলুক না কেন, তাদের মন জানতো যে, কুরআন সত্য, তাতে কোন সন্দেহের অবকাশ নেই। সুতরাং মৃত্যু কামনার চ্যালেঞ্জে সাড়া দিলে সত্য-সত্যই তা ঘটবে। এজন্যই তারা কুরআনের এ প্রকাশ্য চ্যালেঞ্জ গ্রহণ করতে সাহস পায়নি এবং একটি বারের জন্যও মুখ দিয়ে মৃত্যুর কথা বলেনি।

সপ্তম কারণঃ কুরআন কারীম শ্রবণ করলে মু’মিন, কাফির, সাধারণ-অসাধারণ নির্বিশেষে সবার উপর দু’ধরনের প্রভাব সৃষ্টি হতে দেখা যায়। যেমন, হযরত যুবাইর ইব্‌ন মুতআম (রদ্বিয়াল্ল-হু ‘আনহু) ইসলাম গ্রহণের পূর্বে একদিন রসূলুল্ল-হ্ (সল্লাল্ল-হু ‘আলাইহি ওয়াসাল্লাম)-কে মাগ্বরিবের স্বলাত/নামাযে সূরা ত্বূর পড়তে শুনেন। রসূলুল্ল-হ্ (সল্লাল্ল-হু ‘আলাইহি ওয়াসাল্লাম) যখন শেষ আয়াতে পৌঁছলেন, তখন হযরত যুবাইর (রদ্বিয়াল্ল-হু ‘আনহু) বলেন যে, মনে হলো, যেন আমার অন্তর উড়ে যাচ্ছে। তাঁর কুরআন পাঠ শ্রবণের এটাই ছিল প্রথম ঘটনা। তিনি বলেন, সেদিনই কুরআন আমার উপর প্রভাব বিস্তার করে ফেলেছিল। আয়াতটি হচ্ছেঃ

أَمۡ خُلِقُواْ مِنۡ غَيۡرِ شَيۡءٍ أَمۡ هُمُ ٱلۡخَٰلِقُونَ ٣٥ أَمۡ خَلَقُواْ ٱلسَّمَٰوَٰتِ وَٱلۡأَرۡضَۚ بَل لَّا يُوقِنُونَ ٣٦ أَمۡ عِندَهُمۡ خَزَآئِنُ رَبِّكَ أَمۡ هُمُ ٱلۡمُصَۜيۡطِرُونَ ٣٧

Share on facebook
Facebook
Share on twitter
Twitter
Share on linkedin
LinkedIn
সব বিভাগ